জঙ্গি দমনে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা অপরিসীম
মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ
জঙ্গিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। বোমাবাজির মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছে। আর তা করছে ইসলাম ধর্মের নামে। অথচ ইসলাম ধর্ম হচ্ছে, শান্তির ধর্ম। বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, বোমাবাজি ইসলাম সমর্থন করে না কখনোই। জঙ্গিদের আসলে কোনো ধর্ম নেই। জঙ্গি জঙ্গি-ই। জঙ্গিরা দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু, ইসলামের শত্রু। তাদের ভয়ে ভীত হয়ে থাকার সুযোগ নেই। তাদের ভয় বা আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। জঙ্গিদের জয়ী হতে দিতে পারি না আমরা।
জঙ্গিদের মূল দর্শনটাই তো ফ্যাসিবাদী দর্শন। কোনো একটা চিন্তাচেতনা জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইছে সমাজের ও মানুষের মধ্যে। এই দর্শন প্রতিষ্ঠিত করাই মূল টার্গেট। এটাকেই তারা ইসলামের নামে পরিচিতি করতে চাচ্ছে। ইসলাম কখনোই বর্বর, নিষ্ঠুর, হিংস্র ধর্ম নয়। ইসলাম হচ্ছে প্রেম, ভালোবাসা, সহিষ্ণুতা, উদারতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবসেবার ধর্ম। জঙ্গিরা ইসলামকে ভুলভাবে প্রচার, প্রকাশ বা পরিচিত করতে চাইছে, এটার বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম, হুঁশিয়ারি ও প্রয়াস। কারণ ইসলামকে আমরা বিকৃত হতে দিতে পারি না।
সমর কৌশলও রয়েছে জঙ্গিদের। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করাই ওদের সমর কৌশল। অনেকটা চেঙ্গিস বা হিটলারের সমর কৌশলের মতোই। আতঙ্কিত মানুষ সাধারণত প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে। মানুষের যদি প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে যায়, তাহলে উদ্দেশ্য সাধনের দিকে তাদের অগ্রসর হওয়া সহজ হবে।
আইএস, আলকায়েদা, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কিংবা জামায়াত-শিবির, এরা নামে ভিন্ন হলেও মৌলিকভাবে এদের চিন্তাচেতনা এক এবং অভিন্ন। এই উপমহাদেশে প্রথম ইসলামের উগ্রবাদী ব্যাখ্যা দেনÑ মাওলানা আবুল আলা মওদুদী নামে একজন সাংবাদিক। উনি না আলেম ছিলেন, না সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। তবে উনি মেধাবী ছিলেন। বিভিন্ন পুস্তকে, মাসিক পত্রিকায় সে তার অপব্যাখ্যা, ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রচার করতে থাকেন। মানুষকে সংগঠিত করতে থাকেন। এবং ওই ফ্যাসিবাদী উগ্রদর্শনের ওপর একটা দল গঠন করেন, জামায়াতে ইসলামী নামে। কোথাও তারা আইএসের নামে জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে, কোথাও জামায়াত-শিবিরের নামে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, কোথাও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামেÑ এই যে জেমএবি বা বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমান এরা তো ছাত্রশিবিরেরই মানুষ। তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে হতে পারে, কিন্তু গোষ্ঠী এক। এদের পেছনে মূল শক্তিদাতা হচ্ছেÑ জামায়াতে ইসলামী। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জামায়াতে ইসলামী তরুণদের সম্মোহিত করেছিল। বিপথে নিয়েছিল, বিভ্রান্ত করেছিল। এখনকার তরুণদেরও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পেছন থেকে যারা কলকাটি নাড়ছে, নিঃসন্দেহে তারা ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন।
এখানে জঙ্গিরা হামলাগুলো ধর্মের নামে পরিচালিত করছে। যেহেতু তারা ধর্মের নামে এসব করছে, ওদের এই ভুল পথ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পরিবারের দায়িত্ব অন্যতম। এছাড়া আলেম-ওলামা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব অপরিসীম। রাষ্ট্র তার কলাকৌশল ব্যবহার করে কী করে ভুল পথে যাওয়াদের ফিরিয়ে আনা যায়, তা তারা ঠিক করবে। প্রয়োজনে কী করে তাদের কাউন্সিলিং করা যায়, তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারে। শুধু পুলিশ দিয়েই জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদকে থামানো যাবে না। রাষ্ট্র, মানুষ ও সমাজ সচেতনতায় জঙ্গিদের মূলৎউপাটন করা সম্ভব।
পরিচিতি : ইসলামি চিন্তাবিদ
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে
মতামতটি লিখেছেন আশিক রহমান
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন