ভালো খেলোয়াড় তৈরির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে
অঘোর ম-ল
খেলাধুলার জগতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন প্রধান খেলা হিসেবে পরিগণিত। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে প্রতিটি দেশের একেক ধরনের জাতীয় খেলা রয়েছে। বাংলাদেশেরও জাতীয় খেলাÑ কাবাডি বা হাডুডু। কিন্তু বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট খেলা এদেশে আজ খুবই জনপ্রিয়। খেলাটি শুরুর দিকে তেমন গুরুত্ব না পেলেও বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগের মধ্য দিয়ে খুব গুরুত্ব পেয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়েছে। ১৬-১৭ বছরের মধ্যে ক্রিকেট খেলাটি অনেক চরাই-উৎরাইও পার করেছে।
ক্রিকেট খেলার জন্য আজ আবারও সু-খবর, ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসছে। তাদের না আসার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেটা গত বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের ইতিবাচক ঘোষণার মধ্য দিয়ে কেটে গেছে। এটাই হলো বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ক্রিকেটে পারস্পারিক বন্ধুত্বের সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ। ক্রিকেটে ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা বন্ধুর সম্পর্ক সে কথাটা পুরাতন হলেও ইংল্যান্ড দল আবারও প্রমাণ করল। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের হাত ধরেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার চেষ্টা করে। সে সময় ইংল্যা- হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং এমসিসি দল পাঠিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর ইংল্যান্ড দল দেশে আসবে কি, আসবে না এমন শঙ্কা তৈরি হয়, সেই শঙ্কাটা ইংল্যান্ড দল কাটিয়ে দিল।
এখন বাংলাদেশের দায়িত্ব বাড়ল সফরটাকে সুন্দরভাবে শেষ করা। শুধু ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে নিরাপত্তা দেওয়া নয়, বিভিন্ন ইংলিশ মিডিয়া, সাপোর্টারদের থেকে শুরু করে সমস্ত ক্রিকেটপ্রেমী মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের জন্য দায়িত্ব। সে ব্যাপারেও আমরা আশাবাদী হতে পারি। কারণ, অতীতেও বাংলাদেশ অনেক সমস্যা মোকাবিলা করে ওয়ার্ল্ড টি-টুয়েন্টি বা ওয়ানডে ওয়ার্ল্ড কাপ এখানে আয়োজন করেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সুরক্ষিত বলা যায়।
বাংলাদেশ দল অনেক এগিয়েছে সেটারও একটা বড় ধরনের পরীক্ষা হবে এই সিরিজে। বিশেষ করে টেস্টে বাংলাদেশ কতটুকু এগোলো সেটা যাচাই করে দেখার মতো একটা সুযোগ দেশের মানুষ দেখতে পাবে। সেই সুযোগটার সদ্ব্যবহার যেন বাংলাদেশ করতে পারে।
ফুটবল ছিল একসময়ের বহুল জনপ্রিয় খেলা কিন্তু এখন তার জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় অনেক কম। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল কিছুটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। ফুটবলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আসর যেমনÑ বিপিএল, সুপার লীগ ও ঢাকার বাইরে অনেক খেলাধুলা হচ্ছে। অনেক দর্শকও ফুটবল দেখতে স্টেডিয়ামে হাজির হচ্ছে। তবে, বিশ্বমানের ফুটবল উন্নয়ন করতে হলে আরও বেশি বেশি কাজ করতে হবে। মাঝের কিছু সময় ফুটবল অনেক সঙ্কটের মধ্যে ছিল, কিন্তু সেই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সক্ষম হয়েছে বলে আমি মনে করি।
হকিতেও আগের তুলনায় অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। হকি খেলাকে আরও বেশি উন্নত করতে যথেষ্ট সুযোগ প্রয়োজন। স্পন্সরশিপ, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, স্টেডিয়াম, ফ্লাডলাইট, প্রশিক্ষণ ও খেলোয়াড় বাছাই ইত্যাদি দিকেও বাড়তি উন্নয়ন করতে হবে। দেশে হকির স্টেডিয়ামের যথেষ্ট কমতি রয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে লাইটেরও অপর্যাপ্ততা রয়েছে। যেখানে উন্নতবিশ্ব হকি ফ্লাডলাইটে রাতের বেলায় খেলা হচ্ছে, সেই পর্যায়ে দেশে ফ্লাডলাইট সংযুক্ত মাঠ নেই বললেই চলে। শুধু মাওলানা ভাসানী ও বিকেএসপি মাঠের উন্নয়ন দিয়েই হকি উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে এমনটি ভাবাও ঠিক হবে না। খেলাধুলার ক্ষেত্রে উন্নতি করার মতো ভালো খেলোয়াড় তৈরি করার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আমরা যদি সেই সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে সক্ষম হই তাবেই আমরা খেলাধুলার বিভাগকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিতে যেতে সক্ষম হবো বলে আমি মনে করি।
পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক
মতামত গ্রহণ : শরিফুল ইসলাম
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন