ড. বদরুল হাসান কচি
দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি নিজেদের একটি লাল সবুজের পতাকা এবং সংবিধান পেয়েছে। আর এই লড়াই সংগ্রামে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে বাঙালি ভালোবেসে একবার উপাধি দিয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে, আর দেশ স্বাধীন হবার পর ‘জাতির জনক’। তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিশোধ স্পৃহায় সেই পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এদেশীয় কিছু ঘাতকের গুলিতে স্বাধীন দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে প্রাণ দিতে হলো নির্মমভাবে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেইদিন থেকে জাতির জনককে হত্যার লজ্জা আর পাপ নিয়ে জাতি বেঁচে আছে। তারপর সাড়ে তিন দশক পর খুনিদের বিচার করার মধ্য দিয়ে কিছুটা পাপমুক্ত হয় জাতি। কিন্তু পিতা হারানোর বেদনা গোটা জাতিকে বহন করতে হবে শত শত বছর।
কেবল জনক হত্যার বিচারের পাপ নয়, বাঙালি জাতির ঘাড়ে আরও একটি পাপ মোচনের দায় ছিল। দেশ স্বাধীনে বিরোধিতা করে যারা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিতে সহায়তা করেছে, হত্যা ও গণহত্যায় অংশ নিয়েছে, মা-বোনদের নির্যাতন করেছে, সেই দালালদের বিচার করার দায়। নানান প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সেই বিচার কাজ চলছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অদম্য সাহসিকতা এবং দৃঢ় মনোবলের কারণে। দেশীয় আইনে একটি আন্তর্জাতিক মানের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে কিছু অপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে; অনেক মামলা বিচারাধীন। যদিও চার দশক পর বিচার হচ্ছে তবুও এ দায়শোধ জাতিকে মুক্তি ও স্বস্তি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বাংলাদেশের এই বিচার কাজটি বিশ্বের কাছে নজির সৃষ্টি করেছে।
দেশের ঘাড়ে দীর্ঘদিন বিচারহীনতার সংস্কৃতির কলংক ছিল; সেই কলংক থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে দায় মোচনগুলোও সমধিক জরুরি। আর সমান্তরালভাবে দুটো বিষয় নিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে, এই জাতি বিশ্ব দরবারে মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন