মানুষ এখন না খেয়ে থাকে না
ফরিদুন্নাহার লাইলী
বহুবছর আগে কবি রফিক আজাদ লিখেছিলেন, ‘ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো’। কবি লেখকদের কবিতা লেখনিতে সমকালীন বিষয়বস্তুই ফুটে ওঠে। মূলত ঘটনার পরিস্থিতিকে প্রতিবাদ জানিয়ে এই ধরনের কবিতা প্রবন্ধ রচিত হয়। সেইরকম একটি পরিস্থিতিতে কবি রফিক আজাদ এমন একটি কালজয়ী কবিতা রচনা করেন। তা দিয়েই বোঝা যায়, কোথায় ছিল আমাদের এই দেশ, আর আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, দেশের উত্তরাঞ্চলে বছরের একটি সময় খাদ্যের সংকট দেখা দিত; আর সেখানে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণের জন্য লঙ্গরখানা খোলা হতো। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব আর কার্যকর কর্ম-কৌশলের কারণে মঙ্গা দূর হয়েছে। আজ সেই এলাকাগুলোকে কেউ মঙ্গাকবলিত অঞ্চল বলে না। মঙ্গা এখন ইতিহাস; কথাটি কেবল সুখবোধ করে না, আশ্চর্য করে। সকলকেই স্বীকার করতে হবে, স্বীকার করবে ওই অঞ্চলের মানুষজনও।
প্রসঙ্গক্রমে একটি ঘটনা টেনে আনছি, চলতি মাসের শুরুতেই আকর্ষিক বন্যায় দুর্গত বানভাসিদের কাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৮টি টিম ত্রাণ নিয়ে ১৬ জেলায় ছুটে গিয়েছিল। দলের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ভাইয়ের নেতৃত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন এবং আমি গিয়েছিলাম কুড়িগ্রাম। প্রত্যেকটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে আমরা ত্রাণ বিতরণ করেছি। ত্রাণ নিতে আসা সমবেত বানভাসিদের আমরা যখন বলতাম, আপনাদের এখন কেউ মঙ্গা বলে গালমন্দ করে না। এই কথা বলায় সবগুলো মানুষের মুখে হাসি দেখেছি। একসময় তাদের মঙ্গা বলে ভিন্ন জেলার মানুষ গালমন্দ করত সেটা তারা নিজেরাও জানে। আর জানে বলেই আমাদের কথা শুনে তারা কষ্টের মাঝেও একগাল মুখে হাসতে পেরেছে।
এখানে কথাটি উল্লেখ করা দরকার, যদিও আমাদের দল সরকার পরিচালনা করছে তবুও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ত্রাণ দিতে গিয়েছি দলের পক্ষ থেকে; আর সরকার সরকারিভাবে আলাদা ত্রাণ দিয়েছে। পাশাপাশি পুনর্বাসনে যা করণীয় সেই উদ্যোগ নেওয়াও শুরু করেছে সরকার। তাছাড়া সম্প্রতি সরকার ঘোষণা করেছে সেপ্টেম্বর থেকে ৫০ লাখ দুস্থ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হবে। আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ; এই ঘোষণাটি তার চমৎকার উদাহরণ। অন্য যেকোনো সরকারের চেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পার্থক্যটি এখানে। শুধু সাম্প্রতিক বন্যা নয়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ৭ বছরে যতগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে সরকার এবং আওয়ামী লীগ আলাদাভাবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। নিয়েছে বলে কোনো মানুষ না খেয়ে কিংবা চিকিৎসার অভাবে মারা যায়নি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের দল, আওয়ামী লীগ সরকার অধিকার বঞ্চিত মানুষের সরকার। আর এই দল এবং সরকারের মূল প্রেরণা বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই কথা স্পষ্ট করার খাতিরে সাম্প্রতিককালের আরেকটি আলোচিত ঘটনা এখানে উল্লেখ করতে চাই। বান্দরবানের দুর্গম এলাকা থানচিতে এবার ফসল উৎপাদন ভালো না হওয়ায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল। খুবই দুর্গম এলাকা হওয়ায় সরকারি খাদ্য পৌঁছানো অনেকটা কষ্টসাধ্য ছিল। মানুষের অভুক্ত থাকার ঘটনা মিডিয়ায় উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উড়োজাহাজে করে সেখানে দ্রুত খাদ্য পৌঁছে দিয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীন হবার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশকে তাচ্ছিল্য করে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। ৭১-এ এই জাতি প্রথমে অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছে লাঠি দিয়ে, তারপর সকল রণকৌশল রপ্ত করে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেদের পতাকা অর্জন করেছে। অবাক হয়েছে বিশ্ববাসী। আরও অবাক করা ব্যাপার হলো, সেই তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে গৌরবের সঙ্গে যোগ্যতা প্রমাণ করে। তাই গর্ব করে বুকে হাত রেখে বলি, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।
লেখক : সাবেক সাংসদ। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন