প্রতিটি গ্রাম হোক একটি পাঠাগার ২
বাংলাদেশ সমতল ভূমির দেশ হলেও সর্বত্র এর ভূমিচিত্র এক নয়। ফলে দেশের এক অঞ্চলের সমস্যা বা সম্ভাবনার সঙ্গে অন্য অঞ্চলের সমস্যা বা সম্ভাবনার রয়েছে বিস্তর তফাৎ। যেমন যমুনার বিস্তীর্ণ চর এলাকার মানুষের যে জীবনযাত্রা, তারা প্রতিনিয়ত যে ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়, তা থেকে উত্তরণে যে অভিজ্ঞতা তাদের হয় তার সঙ্গে কোনো মিল নেই বরেন্দ্র এলাকার মানুষের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা থেকে উত্তরণ কৌশলের। সমুদ্র উপকূলবর্তী দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে হাওর বা পাহাড়ি এলাকার মানুষেরও সমস্যা বা সম্ভাবনাগুলোও এক নয়। অঞ্চলভেদে দেশের সমস্যাগুলো যেমন ভিন্ন ভিন্ন তেমনি তা থেকে উত্তরণের কৌশলও হতে হবে ভিন্ন ভিন্ন। হাজার হাজার বছর ধরে এ দেশের ভূমিপুত্ররা যেভাবে নিজেদের টিকিয়ে রাখার কৌশল উদ্ভাবন করেছে, তার সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতে হবে আগামীর উন্নয়ন চিন্তাকে। কিন্তু কোনোক্রমেই চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ অনুপ্রবেশকারী যতটুকু শৃঙ্খলা আনে তারচেয়ে বিশৃঙ্খলতাই তৈরি করে বেশি।
অনেকেই প্রশ্ন করেন, পাঠাগার দিতে তো পয়সা লাগে, জমি লাগে এসব আমরা পাব কোথায়? হ্যাঁ, পাঠাগার স্থাপনের জন্য টাকা লাগে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি লাগে ইচ্ছাশক্তি ও আন্তরিকতা। একটি পাঠাগার স্থাপনে প্রথমত যা দরকার, পড়ে তা হলো, সমমনাদের একতাবদ্ধতা। তারপর নিজেদের সংগ্রহে যেসব বই রয়েছে তা একত্রিত করা। বিদ্যালয় কিংবা কারও পড়ার ঘরটাই হতে পারে পাঠাগার। পাঠাগারটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য থাকতে হবে, একটি কমিটি। এমনভাবে এগোলে একটি পাঠাগার কঠিন কিছু নয়।
আপনার উদ্যোগটি যদি সৎ হয়, আপনার আন্তরিকতা যদি মানুষের চোখে পড়ে সহযোগিতার হাত বাড়াবেই। আপনার এলাকার মানষের কাছে যান, ন্যূনতম একটি বই কেনার টাকা (ধরেন ১০০ টাকা) চান, বিনয়ের সঙ্গে তার সঙ্গে আপনার ভাবনাটিকেও ভাগাভাগি করুনÑ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ব্যর্থ হবেন না আপনি। একশো মানুষের কাছে যান, ২০ জন হলেও পাশে পাবেন। জীবনের প্রয়োজনে যারা শহর-নগরে থাকেন, কাজ করেন তারা ঈদ, পূজা-পার্বনে গ্রামে আসেন। যান তাদের কাছেও, অনুরোধ করুনÑ আপনি হতাশ হবেন না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনি ব্যর্থ হবেন না। মনে রাখবেন, পাঠাগার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বই সংযোজিত হবে। যদি লেগে থাকেন, কয়েক বছর পর দেখবেন, আপনাদের স্থাপিত পাঠাগারটিই আলো ছড়াচ্ছে আপনার গ্রামে। যে আলো খুব প্রয়োজন প্রত্যাশিত বাংলাদেশের জন্য।
গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের মূল দর্শন হলো, সমষ্টির মুক্তির ভিতরেই ব্যক্তির মুক্তি। আপনি যখন আপনার গ্রামের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য সমমনাদের নিয়ে একটা পাঠাগার স্থাপন করবেন, তখনই যুক্ত হবেন এই আন্দোলনের সঙ্গে। গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে ধরা-বাধা কোনো নিয়ম নেই। গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন যেহেতু একটা চেতনার নাম, তাই এর নেই কোনো তথাকথিত সাংগঠনিক কমিটি, নেই কোনো সংবিধান। কিন্তু প্রযুক্তির সহযোগিতায় আমরা যুক্ত হতে পারি অতি সহজেই। বলতে পারেন, ফেসবুকে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন নামের যে পেজ রয়েছে তা-ই হচ্ছে আমাদের কার্যালয়। এখানেই আমরা যেকোনো সময়, যেকোনো বিষয় নিয়ে করতে পারি মিটিং, করতে পারি ভালো কাজের প্রচারণা। বিনে সুতায় আমরা যুক্ত হতে পারি একে অপরের সঙ্গে। দাঁড়াতে পারি একজন আরেকজনের বিপদ-আপদে।
লেখক : সংগঠক, গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন