খুশি কবির
বাংলাদেশে নারীর সার্বিক অবস্থা পূর্বের তুলনায় ভালোর দিকে অবস্থান করছে। নারীদের গড় আয়ু পুরুষের তুলনায় বেড়েছে। এতে বোঝা যায় নারীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে। বাল্যবিবাহ আগের তুলনায় অনেক কমেছে। সমাজে এখন বাল্যবিবাহের ব্যাপারে অনেক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে। আগে মহিলাদের বাড়ির বাইরে কাজের সুযোগ-সুবিধা কম ছিল। এখন নারীরা, পুরুষের সঙ্গে ঘরের বাইরেও কাজের সুবিধা পাচ্ছে। মেয়েদের শিক্ষার হারও বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণের ব্যাপারে যে বাধাবিঘœতা ছিল তা এখন অনেকটাই নেই। শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্রামের মেয়েরা পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে নানা জায়গায় নারীর অবস্থান অনেক উন্নত হয়েছে।
তবে কিছু কিছু জায়গাতে নারীর বেশকিছু বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এই বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করতে হবে। নারী শ্রমিকদের মজুরির হার পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় কম দেওয়া হয়। যদিও নারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি কাজ করে থাকেন। নারীদের সবচেয়ে কম মজুরি দেওয়া হয় কৃষি কাজের ক্ষেত্রে। কৃষি কাজ ছাড়াও মিল-করখানায়ও দেখা যায় নারীর মজুরির হার কম পুরুষের তুলনায়। নারীরা শ্রমিক হিসেবে তুলনামূলকভাবে বেশি শ্রম দিয়ে থাকে।
যেহেতু নারী আগের তুলনায় এখন কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে, সেহেতু তাদের নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি লক্ষ্য করার মতো। প্রতিদিন নারীকে নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে, পুরুষদের নারীর সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা এখনও নেতিবাচক। এই বিষয়টি পরিবর্তন তো হয়নি বরং আরও অধিক পরিমাণে বেড়েছে। এখনও পুরুষেরা নারীদের পণ্য হিসেবে দেখে, তাদের মানুষ হিসেবে দেখে না। সমাজে নারীরা সমান অধিকার পায় না। এমনকি পরিবারেও নারীদের অধিকার সঠিকভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে না।
গ্রামেগঞ্জে এখনও অনেক পিতা-মাতা মনে করেন, তারা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের মেয়েরা তাদের দেখতে পারবে না। একজন ছেলে হলে তারা মনে করেন, বৃদ্ধ বয়সে সেই ছেলে তাদের একমাত্র অবলম্বন হবেন। এধরনের বৈষম্য এখনও অনেক স্থানে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, সেই পরিবারে মেয়েরাই তাদের বেশি দেখাশোনা করেন। সবকিছু মিলিয়ে নারীর অবস্থান একঅর্থে এগিয়ে গেছে, অন্যঅর্থে এখনও নারীরা পিছিয়ে আছে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে।
পরিচিতি : মানবাধিকার কর্মী
মতামত গ্রহণ : শরিফুল ইসলাম
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন