কুরবানিতে বাংলাদেশই ভারতের গরু নেবে না
এম কবির: ভারতীয় গরু দেশে আসতে মানা। আর তাই বিপাকে পড়েছে ভারতের চামড়াশিল্প। এরপর আবার গরু কুরবানি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আর যদি নিষেধাজ্ঞাই বহাল থাকে তাহলে চরম বিপাকে পড়বে সেদেশের চামড়াশিল্প এমনটি বলছেন ভারতের চামড়া ব্যবসায়ীরা।
ভারতের গরু আসা নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশের পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছে কুরবানিতে ভারতীয় গরুর প্রয়োজন নেই। চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ গরু মজুদ আছে।
ভারতের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গরু কুরবানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেছেন, ভারতে গরু কুরবানি দিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, বাংলাদেশে কুরবানি বন্ধের দাবি চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের নয়া চক্রান্ত। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বক্তব্য ১৬ কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে কুঠারাঘাতের শামিল। তিনি আরও বলেন, আমরা ধর্মীয় সহনশীলতায় বিশ্বাস করি।
গরুর মাংস দেশে প্রাণিজ আমিষের বড় উৎস। এতদিন সহজলভ্যই ছিল এটি। কিন্তু ভারতীয় গরুর দুষ্প্রাপ্যতায় সুলভ থেকে ক্রমেই তা দুর্লভ হয়ে উঠছে। কমে আসছে ভারতীয় গরু আমদানি বাবদ সরকারের রাজস্বও। এর মধ্যেই ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। যদিও এর বিরূপ প্রভাব কেবল বাংলাদেশকে নয়, মোকাবিলা করতে হবে ভারতকেও। কর্মহীন গরুর পেছনে দেশটিকে বাড়তি ব্যয় করতে হবে বছরে ৩১ হাজার কোটি রুপি। বেশ কমাস ধরেই সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু কম ঢুকছে দেশে। বিএসএফ জওয়ানদের উদ্দেশ্যে রাজনাথ সিংয়ের ওই নির্দেশনার পর ভারতীয় গরু আসা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলেছে, এ বছর দেশে কুরবানির জন্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা প্রায় ৯৭ লাখ। তবে চোগান আছে ১ কোটি ৭৫ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার। তাই চাহিদার জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করার কোনো দরকার নেই।
এদিকে বিজিবি মহাপরিচালক বলছেন অবৈধভাবে ভারত থেকে গরু আনতে গিয়ে সীমান্তে প্রতি বছর মারা যায় ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থা বন্ধে সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, ‘আমার কাছে গরু আসা বড় না, আমার কাছে বড় হলো মানুষ যাতে ও পাড়ে না যেতে পারে। গরু যদি তারা দেয় তাহলে ঠিক আছে। তারা গরু না দিলে গরু নেওয়ার কোনো দরকার নাই’।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক আয়নুল হক বলেন, ‘গত বছর আমরা প্রায় নিরানব্বই ভাগ দেশি গরু দিয়েই কুরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়েছি। গত বছরের চেয়ে এবার পশুর সংখ্যা আরও বেশি আছে। কাজেই পশুর সংকটের কোনো কারণ নেই’।
আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, দেশটির ১১০০ কোটি ডলারের চামড়াশিল্প এ মুহূর্তে চরম সংকটে। জানা যায়, কাঁচা চামড়ার ঘাটতিতে সমস্যায় পড়েছে দেশটির ট্যানারি মালিকরা। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত দুই লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানও হুমকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতে কাঁচামালের জন্য বেড়েছে আমদানিনির্ভরতা। ফলে টান পড়ছে মূলধনে। উৎপাদন ছাঁটাইয়ে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। অনিবার্যভাবে কমেছে রপ্তানিও ।
চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- আঙ্গুল সরাসরি ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের গো-হত্যা বন্ধের ফরমানের দিকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে দেশটির প্রায় দেড় হাজার ট্যানারি।
গো-হত্যা নিয়ে রাজনীতির টানাপড়েনের মাসুল দিচ্ছে চামড়াশিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১০ লাখ মানুষ। রাজনীতি আর সরকারি ফরমান নিয়ে বিভ্রান্তি চামড়াশিল্পকে কতটা অসুবিধায় ফেলেছে, তা স্পষ্ট চামড়া আমদানির পরিসংখ্যানে। ২০১৪-১৫ সালে ৩৫০ কোটি রুপির তৈরি চামড়া আমদানি করে ভারত।
২০১৫-১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটিতে। অর্থাৎ এক বছরে আমদানি বেড়েছে ৭০ শতাংশ। ২০১৪-১৫ সালে চামড়ার জিনিসের মোট রপ্তানি ছিল ৬৪৯ কোটি ডলারের বেশি। ২০১৫-১৬ সালের আর্থিক বছরে তা নেমে এসেছে ৫৮৬ কোটি ডলারে। একছরে কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। সম্পাদনা: রাশিদ রিয়াজ