নেতৃত্ব দ্বন্দ্বে দুই ভাগ হয়ে গেল জবির আন্দোলনকারীরা এক পক্ষের উপর অন্যপক্ষের হামলা, পৃথক কর্মসূচি
মীর রওশন আলম, জবি: চকবাজারের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হল নির্মাণের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন তারা। এক পক্ষে রয়েছে ছাত্রলীগ। অন্য পক্ষে ছাত্রদল এবং বাম সংগঠনগুলো। সাধারণ শিক্ষার্থীরা উভয়পক্ষেই আন্দোলন করছেন। সোমবার ছাত্রলীগ অপর পক্ষের আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে হামলার কথা অস্বীকার করেছে জবি ছাত্রলীগ।
এদিকে মঙ্গলবার পৃথক কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের দুটি অংশ। আজ (মঙ্গলবার) ক্যাম্পাসে ৩ ঘণ্টার অনশন ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে অন্য পক্ষের আন্দোলকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২ আগস্ট থেকে সাবেক কারাগারের জমিতে হল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন জবির শিক্ষার্থীরা। শুরুতে কোনো বিভেদ ছিল না আন্দোলনকারীদের মধ্যে। গত ১৭ আগস্ট আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে। সেখানে যাওয়ার আগে তাঁতীবাজার মোড় থেকে তাদেরকে ক্যাম্পাসে ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করেছিল ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। ২৪ আগস্ট পল্টনে সড়ক অবরোধের সময় জবি ছাত্রলীগের সভাপতি এফএম শরিফুল ইসলাম বক্তব্য দিতে চাইলে তাকে মাইক দেননি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় শরিফের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর ধস্তাধস্তি হয়। শরিফ কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় মারেন। ২৬ আগস্ট শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সংহতি সমাবেশের শুরুতেই সেখানে ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হন জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম সিরাজুল ইসলাম। তবে তাকে ব্যানার ছেড়ে দিতে বারবার মাইকে ঘোষণা দেন কয়েকজন আন্দোলনকারী। পরে বক্তব্য দিতে চাইলে সিরাজের কাছ থেকে মাইক কেড়ে নেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের মধ্যে বাকবিত-াও হয়। তবে কোনো হাতাহাতি হয়নি। আন্দোলনে ছাত্রলীগকে বর্জন করায় ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে ছাত্রলীগ নেতাদের মনে। রোববার ক্যাম্পাসে ছাত্রধর্মঘট পালনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে চাইলে তাদেরকে বাধা দেন জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পরে অন্য একটি গেট দিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে তাদের উপর আবার হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন। সোমবার ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলোসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আন্দোলন শুরু করলে তাদের উপর আবার হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকাল ৮টার দিকে আগে থেকে তাঁতীবাজারে অবস্থান নেন শতাধিক শিক্ষার্থী। তবে সেখান থেকে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে তারা ক্যাম্পাসের প্রধানফটকের সামনে রাস্তার উল্টো পাশে অবস্থান নেন। সেখানে মাইক দিয়ে মিছিল করেন তারা। এসময় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, হলের দাবিতে আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এ আন্দোলনে বাম বা অন্যকোনো ছাত্র সংগঠনের ইন্ধন নেই। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আন্দোলন করতে চাইলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন করেন। আমরা বাধা দেব না। এসময় প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এসময় কয়েকটি বিভাগের ফটকে এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিজ্ঞান অনুষদ ঘুরে কলা অনুষদে পৌঁছে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রায় ৩ শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল নিয়ে সেখানে যায় ছাত্রলীগ অংশ। ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাইক নিয়ে স্লোগান শুরু করেন। তার স্লোগানে শুধু ছাত্রলীগ অংশ সাড়া দেয়। অন্য অংশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে যেতে থাকেন। এসময় ছাত্রদল ও বামপক্ষের আন্দোলনকারীদের উপর হামলা শুরু করে ছাত্রলীগ অংশের আন্দোলনকারীরা। এতে শফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন, নাজমুল হাসান, শাহিন, মনিরুজ্জামান রিপন আহত হন। আহতদের পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আহত শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি মাইক কেড়ে নিয়ে মিছিল শুরু করলে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ছেড়ে চলে যেতে চান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতারা। গুরুতর আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করতে যেয়ে তার হাত ও জামা রক্তে ভিজে যায়।
তবে হামলার কথা অস্বীকার করে জবি ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের কেউ কোনো হামলা চালায়নি। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে বাম সংগঠনগুলো, ছাত্রদল এবং শিবিরের কর্মীরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে কেউ গুপ্ত হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জবি প্রশাসনের কাছে মৌখিকভাবে আবেদন জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জবি প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মাদ বলেন, কোনো পক্ষই তার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আজ পৃথক কর্মসূচি: দুপুরে জবি ভাস্কর্য চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অনশন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগের অংশ। হল উদ্ধার ও নির্মাণ কমিটির আহ্বায়ক জবি ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে আজ সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের অন্য অংশটি। সোমবার বিকেলে রাশেদুল ইসলাম, রাইসুল ইসলাম নয়ন, শফিকুল ইসলাম, মাহিদুল ইসলাম এবং মনিরুল ইসলাম রাজন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেন। সম্পাদনা: আ. হাকিম