মনিরুল ইসলামের ফেসবুক স্ট্যাটাস ইস আমি যদি এতটা সাহসী হতে পারতাম!
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধমে অভিনন্দন জানিয়েছেন ডিএমপির সোয়াত টিম ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে।
তিনি স্ট্যাটাসে লিখেছেন-
বন্ধুগণ, আমি অতি সাধারণ মানুষ, দোষে-গুণে মানুষ। কিছু কিছু গুণ যে আমার নাই তা নয়, তবে ত্রুটি-বিচ্যুতির পরিমাণটাই বেশি। তবুও কেন যেন আপনারা অনেকেই আমাকে পছন্দ করেন, হয়তো আমার ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়টি উপেক্ষা করেন। আবার অনেকে আমাকে অসীম সাহসী, সুপারম্যান হিসেবেও হয়তো ভুল করেন। আমি ভিতু না হলেও কারণে-অকারণে মৃত্যুর ঝুঁকি নেওয়ার মতো অতটা সাহসী নই। যতটা সম্ভব নিরাপদে থাকার চেষ্টা করি। প্রায় ২১ বছর ধরে পুলিশের চাকরি করলেও প্রায় সাড়ে সাত বছর ডিবি এবং কাউন্টার টেরোরিজম এ কাজ করছি। সময়টা নিতান্ত কম নয়, আবার সবটাই যে খুব মসৃন গেছে তাও নয়। অনেক সহকর্মীকে হারিয়েছি, অনেক সহকর্মীর সাহসী পদক্ষেপের কারণে আমরা রক্ষা পেয়েছি, মানুষ রক্ষা পেয়েছে। আমার সহকর্মীরা অনেক সময় যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নেন তা দেখে আমি ঈর্ষাবোধ করি, মনে হয় ইস আমি যদি এতটা সাহসী হতে পারতাম! আমাদের ইউনিটের ঝডঅঞ সদস্যরা যেভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও কর্তব্য পালনে দৃঢ়তার পরিচয় দেন, তখন গর্বিত হই! আমাদের ইড়সন উরংঢ়ড়ংধষ টহরঃ সদস্যরা যখন টহঁংঁধষ এৎবহধফব কিংবা বোমা নিষ্ক্রিয় করেন, দূর থেকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি ছেলেগুলোর কি জীবনের মায়া নেই!
কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জ পাইকপাড়া- দুটো অপারেশনে ঝডঅঞ সদস্যরা যে মাত্রার ঝুঁকি নিয়েছে তাতে মনে হয় ওদের চাইতে অনেক বেশি প্রশিক্ষিত অন্যকোনো দেশের ঝডঅঞ কিংবা ঈড়সসধহফড় সদস্যরা নিজের জীবনকে এতটা সস্তা হয়তো বা নাও মনে করতে পারতো! আমার মনে হয়, কল্যাণপুরের ‘তাজ মঞ্জিল’-এর মতো এত ঘিঞ্জি এলাকার পোড়া বাড়ির ৫ তলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যকোনো দেশের কমান্ডোরা এতদ্রুত সফল অভিযান করতে পারতো না। অন্য অনেক দেশের এ ধরনের হামলা মোকাবিলার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়- কতটা ঝুঁকি এ ছেলেগুলো নিয়েছে। পাইকপাড়া অভিযানে অন্যদেশের কমান্ডো আনলে তারা পুরো এলাকা খালি করে হেলিকপ্টার নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহড়া দিয়ে, পুরো এলাকার পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ করে কী এলাহী কা-টাই না করতো। কিন্তু ঝডঅঞ-এর সদস্যরা নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে কিভাবে অটোমেটিক রাইফেল আর গ্রেনেডের সামনে তিনতলায় অপারেশন করলো ভাবলে হৃদকম্পন হয়!
সিনিয়র কর্মকর্তা হওয়াটা একটা প্রিভিলেজ বটে! এতটা ঝুঁকি নিতে হয় না! এসি গাড়িতে চড়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। বুঝে কিংবা না বুঝে অনেক দূরে সম্পূর্ণ নিরাপদ জায়গায় বুলেট প্রুফ জ্যাকেট আর হেলমেট পড়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করি! ক্যামেরায় আমার ছবি যায়, সবাই মনে করে আমি নায়ক, কিন্তু আসল নায়করা অন্তরালেই থেকে যায়। আমি কল্যাণপুর আর পাইকপাড়া অভিযানের আসল নায়ক, প্রকৃত সুপারহিরো ঝডঅঞ ঞবধস আর পার্শ্বনায়ক ইড়সন উরংঢ়ড়ংধষ টহরঃ কে তাদের অদম্য সাহসিকতা আর রণকৌশলের জন্য প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাতে চাই! ঐধঃং ড়ভভ, ঝডঅঞ! ও’স ঢ়ৎড়ঁফ ড়ভ ুড়ঁ মুঁং!!! সম্পাদনা: আ. হাকিম