গুলশান হামলার পরদিনই বাসা ভাড়া নেয় অর্ধশত বিদেশি বসবাস করেন ফতুল্লার ভূঁইগড়ে জঙ্গিদের টার্গেট ছিল নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত বিদেশিরা
বিপ্লব বিশ্বাস: বসবাসরত বিদেশিদের টার্গেট করেই নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার বাড়িতে আস্তানা গেঁড়েছিল জঙ্গিরা। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পরদিনই নারায়ণগঞ্জের ওই বাড়িতে আস্তানা গড়ে তোলে। বিদেশিদের হত্যার উদ্দেশ্যেই ওই হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ জঙ্গিদের একটি অংশ সেখানে অবস্থান নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের শিল্প এলাকায় গার্মেন্ট কারখানা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আদমজীতে রয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, ইপিজেড। সেখানে ২৮২ জন বিদেশি কাজ করে। তবে পাইকপাড়ায় তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গির মৃত্যুর পর শহরে আরও কোনো জঙ্গি থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় চলছে ব্লক রেইড।
এদিকে, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল, কাচপুর শিল্পাঞ্চলেও রয়েছেন অনেক বিদেশি। এদের মধ্যে অর্ধশত বিদেশি নাগরিক বসবাস করেন সদর উপজেলার ফতুল্লার ভূঁইগড়ে। সেখান থেকে ঢাকা, ফতুল্লা, আদমজী, কাচপুরে যাতায়াত খুবই সহজ। গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া এলাকায় তিন জঙ্গি নিহতের পর গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটি আবারও আলোচনায় আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, গুলশানে হামলার পর এ ব্যাপারে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তাতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত বিদেশিরাও ঝুঁকির বাইরে নন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিদের অবস্থানের মূল লক্ষ্য ছিল রাজধানীর আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত বিদেশিদের ওপর হামলা চালানো। এ টার্গেট নিয়েই তারা ঘনবসতিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ এলাকা বেছে নেয়।’
গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলেছে, গুলশান হামলার আগেই জঙ্গিদের একটি ছক করা ছিল। তাতে ছিল গুলশান হামলার পর জঙ্গিরা কারা কোথায় থাকবে, কী করবে- সবকিছু। সে ছক অনুযায়ী ১ জুলাই গুলশানের হামলার পরদিনই নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার বাড়িতে ওঠে জঙ্গি তামিমসহ অন্যরা। আর সেজন্য জুনের শেষেই বাসাভাড়ার অগ্রিম হিসেবে ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করে জঙ্গিরা।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, পাইকপাড়ার ওই এলাকাটি সবদিক থেকেই নিরাপদ। কারণ পাইকপাড়া থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। উত্তরের দুটি সড়ক দিয়েই শহরের দিকে যাওয়া যায়, যেখান থেকে রাজধানী মাত্র ৩০ মিনিটের পথ। যাওয়া যায় দেশের পূর্বাঞ্চলেও। বাড়িটির দক্ষিণ দিক দিয়ে চলে গেছে দুটি সড়ক। কিছুটা প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর তেমন কোনো উপস্থিতিও নেই। এছাড়া যে বাসাটি জঙ্গিরা ভাড়া নেয়, তার পাশেই আছে একটি কবরস্থান। এ কারণে সেখানে প্রচুর বাইরের লোকজন যাতায়াত করে। ফলে তামিমসহ অন্যরা যারা বাসাভাড়া নেয়, তাদের নিয়ে খুব আগ্রহও ছিল না এলাকাবাসীর। সম্পাদনা: আ. হাকিম