মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ১ লাখ টাকার চক্করে খুলনার অসংখ্য ক্যান্সার রোগী জীবন মৃত্যু নিয়ে লড়াই করছেন
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আমার বাসা মিরপুর। এক সময় আমি দৈনিক যুগান্তরে চাকরি করতাম। যুগান্তরের অফিসটি ছিল মতিঝিলে। প্রতিদিন মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে আমার প্রাণশক্তির প্রায় পুরোটা রাস্তাতেই শেষ হয়ে যেত। খুব সম্ভবত, এর চেয়ে চাঁদে যাওয়া সহজ। ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেল হচ্ছে। আর মাত্র কষ্ট করে তিনটি বছর। এরপর আমি এবং আমার মতো অসংখ্য মানুষ কত আরাম করে মতিঝিলে যাতায়াত করতে পারবে, এটা ভেবেই আমার অসম্ভব আনন্দ হচ্ছে। সুখ স্বপ্ন দেখার একটা আলাদা সুখ আছে। মানুষ যখন চমৎকার একটি ভবিষ্যত স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যায়, সেই অভিজ্ঞতা তুলনাহীন। আমি, আমার স্ত্রী এবং আমার দুই কন্যা আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা অপেক্ষা করছি এবং দোয়া করছি, আপনি মেট্রোরেল বাস্তবায়নের পথে ভালোভাবে এগিয়ে চলুন। আমরা মিরপুরের ৪টি প্রাণী আপনার সঙ্গে আছি।
আপনাকে আরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, পদ্মা সেতুর জন্য। এটাও কয়েক হাজার কোটি টাকার মামলা। আপনি আরও ধন্যবাদ পাবেন কবি শহীদ কাদরীর জন্য। তাকে আপনি আপনার ব্যক্তিগত বাজেট থেকে দেশে নিয়ে আসছেন। একজন রাষ্ট্রপ্রধান যখন একজন কবির জন্য এই রকম আত্মত্যাগ করেন, সেটা সারা পৃথিবীর জন্য একটা অনন্য নজির হিসেবে দেখা দেয়। আমরা সাধারণত সরকারের প্রশংসা করি না। এটা আমাদের অভ্যাসের মধ্যে নেই। আমরা প্রশংসার বদলে করি তেলবাজি, আর সমালোচনার বদলে কুৎসা। তেল কিংবা কুৎসা, দুটোর পেছনে একটা মতলব থাকে। প্রশংসা বা সমালোচনা আসে অন্তর থেকে। মেট্রোরেলের জন্য, পদ্মা সেতুর জন্য, কবি শহীদ কাদরীর জন্য আমি অন্তর থেকে নিভৃতে আপনার প্রশংসা করছি।
এবার প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আরেকটি কাজ করতে হবে। আমি নিশ্চিত, কেউ আপনাকে এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। জানালে এতক্ষণে আপনি সমস্যাটির সমাধান করে ফেলতেন। খুলনায় একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে। বাজেট মাত্র ১ লাখ টাকা। ব্যাপারটি একটু খুলে বলি। খুলনা হাসপাতালে একটি মেশিন আছে। যেটা দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করা হয়। যারা ব্লাড ক্যান্সার কিংবা থ্যালাসিমিয়ার রোগী, তাদের জন্য এই মেশিন বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। অথচ এই মেশিনটি দীর্ঘদিন যাবৎ নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। এই মেশিনটি সারাতে ব্যয় হবে মাত্র ১ লাখ টাকা। এই ১ লাখ টাকার চক্করে খুলনার অসংখ্য ক্যান্সার রোগী জীবন মৃত্যু নিয়ে লড়াই করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কথাটা শুনে আপনার খারাপ লাগবে। আপনার চোখে জল আসবে। তবু বলি। এইসব ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে অসংখ্য শিশু আছে। সেই রকম এক শিশু অহন। যার বয়স ৯ বছর। দীর্ঘদিন যাবৎ সে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছে। তার জন্য অনেক রক্ত লাগে। সেই রক্ত বাংলাদেশের তরুণেরা তাকে জোগাড় করে দেয়। এতদিন সে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রক্ত পরিষ্কার করত। মেশিন নষ্ট থাকায় তাকে ছুটতে হয় যশোরে। এর জন্য প্রতিবার তার অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা লাগে।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, উন্নয়ন মানে কি কেবলই বড় বড় সেতু আর মেট্রোরেল? ৯ বছরের অহনদের জন্য ১ লাখ টাকা যোগান যদি না হয়, তাহলে সেই উন্নয়নের কি মানে? আমি শতভাগ নিশ্চিত, এই তথ্য আপনি জানলে, পুরো ব্যাপারটি সমাধান করতে সময় নেবেন ৬ মিনিট। ৫ মিনিট ধরে আপনি চা খাবেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ঝাড়ি দেবেন, কেন কাজটি এতদিন ঝুলে আছে, আর বাকি ১ মিনিটে আপনি গোটা সমস্যাটির তাৎক্ষণিক সমাধান করে ফেলবেন। এখন সমস্যা হচ্ছে, এই তথ্যটি আপনাকে কে জানাবে? তোষামদ বাহিনীর দেয়াল ফুঁড়ে, ছোট্ট অহনের কান্না যদি আপনার কানে পৌঁছায়, তাহলে তো হয়েই গেল। মাত্র ১ মিনিটে সব সমস্যার সমাধান। আমি সেই আশায় আছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।