স্বদেশেই শয্যা নিলেন শহীদ কাদরী
মাহমুদুল আলম: ‘সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমারি দুখানি নয়নে’- কবিগুরুর এই পংক্তির মতো প্রবাসী কবি শহীদ কাদরীরও সব পথ শেষ হয়েছে ‘প্রিয়তমা’ স্বদেশে। বারবার আবাস বদলের জীবনে যার কাছে স্বদেশ ছিল প্রিয়তমা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কবি শহীদ কাদরী। এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কবি ভক্ত, পাঠক, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসা আর অভিবাদনে সিক্ত হয়েছেন। গত রোববার নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান ৭৪ বছর বয়সী শহীদ কাদরী।
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় গতকাল সকাল পৌনে নয়টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে কবির মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায়। এরপর বারিধারায় বড় ভাইয়ের বাসা ঘুরে সকাল সোয়া ১১টার দিকে কফিন পৌঁছায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শুরু হয় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- নিয়ে শহীদ কাদরীর যন্ত্রণা উচ্চারিত হয়েছিল ‘হন্তারকদের প্রতি’ কবিতায়। তিনি লিখেছিলেন ‘এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো কথা আমি আর শুনবো না কোনোদিন।’
গতকাল তার কফিনে প্রথম শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মো. জয়নুল আবেদিন ও বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল। এরপর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব মনজুরুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি ফুল দেন তার কফিনে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বাংলা একাডেমি, গণসংহতি আন্দোলন, শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব, ছায়ানট, ঢাকা থিয়েটার, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, খেলাঘর, জাতীয় কবিতা পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় কবির প্রতি।
এছাড়া সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, আখতার হুসেন, মুনতাসীর মামুন, আবুল হাসনাত, ইমদাদুল হক মিলন, হারুন হাবীব, আবুল বারক আলভী, শামসুজ্জামান খান, সুলতানা কামাল, অধ্যাপক আহমেদুল কবির, দিলারা হাফিজ, কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মনজুরুল আহসান বুলবুল, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি নাসির আহমেদ, ম. হামিদসহ অনেকে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস জানান, শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। জোহরের নামাজের পর সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে জাতীয় কবিতা পরিষদের কবি মুহাম্মদ সামাদ জানান, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর কবি শহীদ কাদরীর স্মরণে নাগরিক শোকসভা আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও কবিতা পরিষদ। ওইদিন বিকাল ৪টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে হবে এ সভা।
১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায় জন্ম নেওয়া শহীদ কাদরী সাতচল্লিশে দেশভাগের পর বাংলাদেশে আসেন। ১৯৭৮ সালের পর থেকেই বাংলাদেশের বাইরে তিনি; জার্মানি, ইংল্যান্ড হয়ে ১৯৮৫ সালে স্থায়ী হন যুক্তরাষ্ট্রে। সম্পাদনা: মোরশেদ