কেরির বাংলাদেশ ও ভারত সফর ত্রিদেশীয় চুক্তির প্রাক-সূচনা
বিশ্বজিৎ দত্ত: আগামী মাসেই বাংলাদেশ সফরে আসছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীন কৌশলগত ও বাণিজ্যিক দিক থেকেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। জন কেরির বাংলাদেশ সফরের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ চীন সফর করেছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক আরও জোরালো হবে বলেও মন্তব্য করেছেন। এ হিসেবে জন কেরির বাংলাদেশ সফর আসলে চীন বলয়ের বাইরে বাংলাদেশ ও ভারত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন একটি বলয় সৃষ্টি করা। অন্যদিকে চীন চাচ্ছে নেপাল, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিয়ে অন্য একটি বলয় সৃষ্টি করা, যা হবে বঙ্গোপসাগর তথা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বাইরের একটি প্রভাব বলয়। যাতে ভারতকে চাপে রাখা যায়।
জন কেরি বাংলাদেশ সফরে কোনো ধরনের চুক্তি করেননি। তিনি তার ২৮ মিনিটের বক্তব্যে বলেছেন, আমি চেষ্টা করছি, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন। এ সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি জোর দিয়েছেন, আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার। এ জন্য তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন বন্ধুত্ব ও পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলেছেন। তিনি বঙ্গোপসাগরে যৌথভাবে কার্টার জাহাজের টহল জোরদারের কথাও বলেছেন। বাংলাদেশে কেরির এ সফর আশ্বাস ও বন্ধুত্বের হলেও ভবিষ্যৎ একটি আঞ্চলিক চুক্তির সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
তিনি ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছেন, সেটি হলোÑ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে। এ চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারত দুটি অনুমোদন লাভ করেছে। একটি হলোÑ ভালো সন্ত্রাসী ও খারাপ সন্ত্রাসী বলে কিছু নেই। সন্ত্রাসী মানেই সন্ত্রাসী ভারতের এ দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সামিল করা। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের মদতপুষ্ট একদল তালিবানকে ভালো সন্ত্রাসী ও আফগানিস্তানে যুদ্ধরত তালিবানদের খারাপ সন্ত্রাসী বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় লাভটি করেছে, কাশ্মীরে পাকিস্তানের সহায়তাকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া।
ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতার এ চুক্তি পরোক্ষভাবে হলেও বাংলাদেশও আসলে সামিল হয়েছে। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলে চুক্তি করেছে। এখন ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে নিল যুক্তরাষ্ট্র। এ হিসেবে ভারতের সামরিক ঘাঁটিগুলো যৌথভাবে ব্যবহার করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ। অদূর ভবিষ্যতে এ চুক্তিটি সম্প্রসারিত হয়ে ত্রিদেশীয়ও হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ কেরি বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ মহড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখও করেছেন। এর আগে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নীশা দেশাই বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে সন্ত্রাস দমনে কাজ করবে বলে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছিল। আবার সব সন্ত্রাসীই একÑ এ বক্তব্যের মাধ্যমে আইসিস, জেএমবি ও উলফাসহ অন্যান্যরা একই কাতারে চলে এলো। সম্পাদনা: ইমরুল শাহেদ