পাপের সামাজিক প্রভাব
কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক
পাপের কারণে মানুষের অন্তরাত্মা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, তার আত্মা ঢেকে যায় অন্ধকারাচ্ছন্নতার চাদরে। সে তখন নানা প্রকার বিপদ-আপদে আক্রান্ত হয়ে ভালো কাজের শক্তি-সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। এ কারণে আল্লাহতায়ালা কোরআনে বারবার এ সম্পর্কে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, পাপ থেকে দূরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন ও পাপের কারণে অতীত জাতিগুলোর ওপর যেসব আজাব-গজব নেমে এসেছিল, তার বিবরণ তুলে ধরেছেন সবিস্তারে। সাবধান হতে বলেছেন এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। ইরশাদ হয়েছেথ ‘যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখ, তাদের কিছু পাপের কারণে আল্লাহ তাদের শাস্তি দিতে চান।’ সুরা মায়িদা: ৪৯
ব্যক্তির পাশাপাশি সমাজের ওপরও পাপ ও পাপাচারের নেতিবাচক নানাবিধ প্রভাব রয়েছে, যা ক্রমান্বয়ে সমাজকে পাপের খেলায় মত্ত করে তোলে, ধ্বংসের বীজ ছড়িয়ে দেয় সর্বত্র। সমাজে পাপাচার ও তার ক্ষতিকর প্রভাব বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পাপাচারের কারণে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির বিস্তার ঘটে, দূষিত হয় পরিবেশ। দেখা দেয় নিরাপত্তার অভাব, বিঘœ ঘটে শান্তি-শৃঙ্খলার, ভীতি ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহভাবে। কখনও অনাবৃষ্টি, কখনও অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্প, ঝড়-তুফানসহ দেখা দেয় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মানববিধ্বংসী যুদ্ধ, আগ্রাসন ইত্যাদি বিবিধ অস্বাভাবিকতা মানুষের পাপাচারেরই ফসল।
তাই ইসলাম যাবতীয় পাপ ও অন্যায়-অনাচার থেকে বাঁচার জন্য সমষ্টিগত ব্যবস্থাপনা দিয়েছে। ইসলাম বলেছে, নেকির উদাহরণ হলো শক্তিবর্ধক ভিটামিনের মতো। টনিকের মতো। আর গুনাহর উদাহরণ হলো বিষের মতো। আমাদের সাধারণ অভ্যাস হলো আমরা নেক কাজ খুব বেশি করি। বহু নফল পড়ি। জিকির করি। কিন্তু গুনাহ থেকে বাঁচার ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব আরোপ করি না। অথচ গুনাহ থেকে বাঁচার গুরুত্ব খুব বেশি। যদি ছয় মাস কেউ শক্তিবর্ধক ও স্বাদু খাবার খায়, উন্নত জাতের বাদাম খায়, টনিক খায়, তার ছয় মাস পর বিষ খায়, তা হলে কী হবে বলুন? ছয় মাসে যে শক্তি অর্জন করেছে তা শেষ হয়ে যাবে নিঃশ্বাসে। আগামী ছয় মাসে শক্তি অর্জনের যোগ্যতা বিনষ্ট হয়ে যাবে। অনুরূপ গুনাহ। গুনাহর কারণেও মানুষের ইমানি ও রুহানি (আধ্যাত্মিক) সুস্থতার ওপর ভীষণ মন্দ প্রভাব পড়ে। এ কারণেই গুনাহ থেকে সমাজকে পবিত্র করার প্রতি ইসলাম অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কেননা যে সমাজে রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে আছে, সেখানে যদি কেউ থাকে তা হলে সেও অসুস্থ হয়ে পড়বে। মানুষ এ থেকে বাঁচতে পারবে না।
গুনাহ এত খারাপ ও ভয়ানক যে, এর কারণে পরিবেশ ও সমাজ দূষিত হয়ে যায়। তখন সেই সমাজ ও পরিবেশে থাকা লোকজন এর প্রভাবে প্রভাবান্বিত না হয়ে পারে না। এজন্য আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের দায়িত্বে এটা আবশ্যক করেছেন বরং খায়রে উম্মতের প্রত্যেক সদস্যকে এই জন্যই সৃষ্টি করেছেন যে, তারা যেন সমাজ ও পরিবেশকে গুনাহর কলুষতা থেকে পরিষ্কার করে। ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান কর, অসৎ কাজে নিষেধ কর।’ -সুরা আল ইমরান: ১১০
সমাজের দায়িত্ব হলো সবধরনের পাপাচার ও অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। উপদেশ ও নসিহতের মাধ্যমে পাপাচার নির্মূল করা। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার কর্মপন্থা গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে অলসতা ও গাফিলতি প্রদর্শন প্রকারান্তরে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের জন্য সমূহ বিপদ ডেকে আনবে, সন্দেহ নেই। পাপ নির্মূলের চেষ্টা না করে যদি পাপের সঙ্গে সহাবস্থানের মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়, আল্লাহ পক্ষ থেকে তবে শাস্তি নাজিল হওয়া অবধারিত। এমনই ভাবে সমাজের ভালো লোকেরা যদি পাপাচারে লিপ্তদের পাপ কাজে বাধা না দেন, তাহলে এ পাপের কারণে যে দুর্যোগ নেমে আসবে, তা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সব ধরনের আজাব-গজব থেকে হেফাজত করুন। আমিন।