জিলহজের দশ দিনের আমল
মুফতি মুহাম্মদ আরাফাত
দয়াময় আল্লাহ, সৃষ্টি করেছেন মানুষ। বানালেন তার খলিফা তথা প্রতিনিধি। করেছেন শ্রেষ্ঠ ও শেষ নবির উম্মত। দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্ব। উদ্দেশ্য তার ইবাদাত। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি জিন আর মানব জাতি সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদাতের জন্য। সুরা জারিয়াত: ৫৬
এই ইবাদত আল্লাহর জন্য। পরকালে বান্দা পাবে তার উত্তম প্রতিদান। কোন কোন মাস থাকে ইবাদাতের ভরা মৌসুম। প্রভূ সন্তুষ্টির সুবর্ণ সুযোগ। নেক উপার্জনের অপার সম্ভাবনা। জিলহজের প্রথম দশ রাত তার অন্যতম। মুমিন বান্দার কাছে জিলহজের প্রথম দশ রাতের রয়েছে গুরুত্ব মাহাত্ম্য তাৎপর্য ফজিলত ও করণীয় আমল। মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার সামনে এই দশ রাতের গুরুত্ব আর তাৎপর্য বুঝাতে দশ রাতের নামে শপথ করেছেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, শপথ ফজর কালের এবং দশ রাতের। শপথ জোড় ও বেজোড়ের। সুরা ফাজর: ১-৩
সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস রা. ও ইবনে যুবাইর রা. আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যে দশ রাতের শপথ করা হয়েছে তা জিলহজের প্রথম দশ রাত। এ রাত সমূহকে আল্লাহ তায়ালা বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। কোন কোন মুফাসসির ফজর বলতে জিলহজের দশ তারিখের ফজর বুঝিয়েছেন এবং জোড় বলতে দশ জিলহজ ও বেজোড় বলতে নয় জিলহজ আরাফার দিন বুঝিয়েছেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি প্রিয় জিলহজের প্রথম দশ দিন। প্রিয় এই দিনগুলোর ইবাদত। প্রিয় ইবাদতকারি বান্দা। হজরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল সবচে প্রিয়। বুখারি শরিফ: ৯৬৯
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা.ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচে মহৎ দিন কুরবানির দিন।
হাফেজ ইবনে হাজার র. এর তাৎপর্য বলেন, এই দিনগুলোতে সকল ইবাদাতের সমাবেশ ঘটে। যেমন: নামাজ রোজা হজ সদকা, যা অন্য সময়ে সম্ভব নয়।
এই ফজিলতপূর্ণ দশ দিন বান্দা কাটাবে ইবাদাতে। কাটাবে জিকির আজকার ও তেলাওয়াতে। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, জিলহজের প্রথম দশ দিনের ইবাদাত আল্লাহ তায়ালার কাছে অন্য দিনের তুলনায় বেশি প্রিয়। প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো। আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো। তিরমিজি শরিফ: ৭৫৮
এই দশ দিনের আমলে আছে বেশি বেশি তাকবির তাহলিল ও আল্লাহ পাকের প্রশংসা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে এই দশ দিন থেকে মহৎ দিন এবং প্রিয় আমল আর নেই। তাই তোমরা এই দিনগুলোতে অধিক হারে তাকবির তাহলিল ও তাহমিদ পড়। মুসনাদে আহমদ।
মুমিন বান্দা বিশেষ করে রোজা রাখবে ৯ জিলহজ আরাফার দিন। হজরত আবু কাতাদাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, আরাফার দিন রোজা রাখলে আল্লাহ তায়ালা পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। মুসলিম শরিফ: ১৬৬২
শক্তি সামর্থ্য থাকলে এই দিনগুলোতে বায়তুল্লাহর হজ করা। কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন, মানুষের মাঝে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ করা ফরজ। সুরা আল ইমরান: ৯৭
দশ জিলহজ মুমিন বান্দা সামর্থ্য থাকলে পশু কুরবানি করবে। এই কুরবানি ইবরাহীমি সুন্নাত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড়। এবং কুরবানি কর। সুরা কাউসার: ৩
আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, কুরবানির দিন বনি আদম এমন কোন কাজ করতে পারেনা যা আল্লাহর কাছে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে বেশি প্রিয়। তিরমিজি শরিফ। হজরত উম্মে সালমা রা. বলেন, যখন জিলহজ মাসের সূচনা হয় আর তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা করে সে যেন চুল নখ ইত্যাদি না কাটে। সুনানে নাসায়ী
জিলহজের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। মহান শক্তিধর আল্লাহ পাকের কাছে এই প্রার্থনা এই আমলগুলোর মাধ্যমে জান্নাত হয় যেন আমাদের ঠিকানা।
লেখক: শিক্ষক; জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাগ ঢাকা।