‘শপথ ভঙ্গ করেছেন দুই মন্ত্রী’
এস এম নূর মোহাম্মদ: সংবিধান সমুন্নত রাখার দায়িত্ব পালনে শপথ ভঙ্গ করেছেন সরকারের দুই মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক। আদালত অবমাননার দায়ে দুই মন্ত্রীকে জরিমানা করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমনটিই জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫৪ পৃষ্ঠার ওই পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়।
রায় লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এরমধ্যে শপথ ভঙ্গের বিষয়ে বিচারপতি ইমান আলীর লেখা রায়ে একমত পোষণ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
আর আদালত অবমাননায় দুই মন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে জরিমানার ব্যাপারে আট বিচারপতি একমত প্রকাশ ক?রলেও শপথ ভঙ্গের ব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করেন তিন বিচারপতি। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর দেওয়া রায়ে একমত পোষণ করেছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি নিজামুল হক।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার রায়ে বলেন, আমি আমার ভাই মোহাম্মদ ইমান আলীর রায় পড়েছি। অবমাননাকারীদের দোষী সাব্যস্ত করা এবং তাদের দেওয়া দ-ের বিষয়ে দ্বিমত পোষণের কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। তবে অবমাননাকারীদের শপথ লঙ্ঘনবিষয়ক অংশের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করতে পারছি না।
তিন বিচারক আরও অভিমত দেন তাদের (দুই মন্ত্রীর) শপথ ভঙ্গ করার বিষয়টি এ আদালতের বিচার্য্য বিষয় ছিল না। শপথ ভঙ্গের বিষয়টি তাদের নজরেও (নোটিসে) আনা হয়নি। যারা এখন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে তারা আদালত অবমাননা করেছেন কি করেননি সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের রায়ে বলা হয়, সংবিধান অনুসারে আইনের শাসন সুরক্ষায় দুই মন্ত্রী অবহেলা করেছেন। আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বক্তব্য রেখেছেন। তবে তারা দোষও স্বীকার করেছেন। বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা বিচার বিভাগের মর্যাদাকে খাটো করেছেন। তারা রায় প্রদান প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে কুৎসা রটনা করেছেন। এটা মারাত্মক ফৌজদারি আদালত অবমাননা এবং সংবিধানে প্রদত্ত ব্যবস্থার লঙ্ঘন। এ কারণে তারা সহানুভূতি পেতে পারেন না। এজন্য তাদের ন্যূনতম সাজা দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৫ মার্চ এক আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বাদ দিয়ে মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার আপিল শুনানি পুনরায় করার দাবি জানান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশের পর ৮ মার্চ দুই মন্ত্রীকে তলব করেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে নোটিস জারি করা হয়। সম্পাদনা: সৈয়দ নূর-ই-আলম