মাংস শ্রমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জরুরি
কোরবানির ঈদ আসলেই, নানা ফন্দিফিকির নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, সরকারকে সহযোগিতা না করে নানা দাবি তুলে অস্থির করে তুলি। কম দামে পশু পেতে হবে। যানজটমুক্ত পশু পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে লবণ দিতে হবে। চামড়া পাচার বন্ধ করতে হবে। এলাকার সবচেয়ে বড় মাস্তান ভাড়া করে কোরবানির চামড়া যাতে আমি কিনতে পারি সে ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি টাকা নিয়ে চামড়া না কিনে জমির ব্যবসা করব আর বিদেশে চামড়ার দাম কমে গেছে জনমনে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এমন ফন্দিফিকিরের শেষ নেই। ইতোমধ্যে এসব শুরুও হয়ে গেছে।
ঢাকা থেকে কাঁচা চামড়া ভারতে পাচার হতে পারে না কারণ চামড়া পচে যাবে। সীমান্ত এলাকায় কিছু পাচার হতে পারে। কোরবানির পর লবণযুক্ত চামড়া পাচার হয়। তবে সঠিক মূল্য নির্ধারণ হলে উল্টো ভারত থেকে চামড়া পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসবে।
একসময় এদেশের কৃষকেরা ঘরে ঘরে কোরবানির গরু পালন করে স্বাবলম্বি হতেন। গ্রামে মহিলারা দু’একটি গরু-বাছুর বড় করতেন। এটি গ্রামীন সংস্কৃতির অংশ। ঈদে গরু বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের জন্য কাপড় কেনা, ঋণ পরিশোধ করা এবং আগামীর জন্য নতুন গরু কেনা এসবই ছিল একজন কৃষকের উৎসব। একানব্বইয়ের পরে আমরা ধীরে ধীরে ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লাম। সস্তায় মাংস খাওয়ার লোভে, কম দামে বড় গরু কোরবানি দেওয়ার প্রলোভনে। ভারতের গরু ছাড়া যেন আর কিছুই বুঝি না। ভারতীয় গরুর সঙ্গে দেশের কৃষকরা প্রতিযোগিতায় না পেরে ধীরে ধীরে গরু পালন বন্ধ করতে শুরু করল। এ সুযোগে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা স্বরূপে আবির্ভূত হলো।
তাদের গরু ছাড়া এখানে কোরবানি হবে না। তাদের গরু মহিষ ছাড়া আমরা চলতে পারব না। গোহত্যা মহাপাপ, আমরা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে চাই না। অথচ ভারত মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর পরিমাণে গরুর মাংস রপ্তানি করছে। এর চেয়ে উপহাস আর কি হতে পারে! গরু মহিষ নিয়ে দাদাগিরি করায় ইতোমধ্যে সরকার প্রান্তিক কৃষকদের ৫% সুদে ঋণ দিয়ে পশু পালনে উৎসাহিত করছে। বাণিজ্যিকভাবে পশু পালনের জন্য সমবায়ের মাধ্যমে চরাঞ্চল, বনাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চলে পশু পালনে সহযোগিতা করছে। মহিষের বাজার দখল করছে ভূটান, নেপাল, মায়ানমার। ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে পশু আমদানি করার চেয়ে নিজের দেশের কৃষকদের সহায়তা দিয়ে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া অনেক ভালো। চামড়া শিল্প উন্নয়নে মাংস শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কিন্তু প্রশিক্ষণের পদ্ধতি যথাযথ না হওয়ায় প্রকৃত মাংস শ্রমিকরা চামড়া কাট, ছাট, লেছ কাট, প্লেকাট ঠিক করতে পারছে না। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও চামড়ার মান উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। প্রশিক্ষণ হতে হবে প্রতিটি জবাই খানায় দশজন করে মাংস শ্রমিককে, প্রশিক্ষণ দিতে হবে হাতে কলমে।
তাদেরকে দেখিয়ে দিতে হবে কিভাবে গরু জবাই করতে হয়, কিভাবে চামড়ার কাট, ছাট ঠিক করতে হয়। কিভাবে চামড়া ছাড়ালে লেজ কাট মুক্ত হয়।
এ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ খরচ অনেক কম হবে এবং প্রতিবছর প্রশিক্ষণের আয়তন বৃদ্ধি পাবে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে আমরা যারা চামড়া ও পশুর বর্জ্য রপ্তানি করে লাভবান হচ্ছি, তাদেরকে নিয়ে প্রশিক্ষণের খরচের জন্য তহবিল গঠন করতে হবে। সরকার, ট্যানারির মালিক, চামড়া ব্যবসায়ী, হাড়, পেনিস, গোল্লা রপ্তানিকারক, মাংস ব্যবসায়ী সবাই মিলে দেশ ও জাতির স্বার্থে একটি মাংস শ্রমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গঠন করতে পারি। লোক দেখানো সভা সেমিনার করে চামড়া শিল্পের উন্নয়ন হবে না, প্রয়োজন সঠিক উদ্যোগ ও আন্তরিকতা।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন