ফিরোজ আহমেদ
খুব সম্প্রতি একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বিদ্যালয়ের বেতন শোধ করতে না পারায়। শিশুর অপমানের বোধ কত গভীর আর মর্মান্তিক হতে পারে, তা বড়রা প্রায়ই ভুলে যান। এই রকম একটা খবর দুর্বিষহ বোঝার মতো চেপে থাকে মনের ওপর।
ভাবছিলাম, বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবলে উড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিদের, সেটা নিয়ে লিখব। খুব ছেলেবেলায় যখন প্রথম জেনেছিলাম, মেয়েদেরও ছেলেদের মতোই কানামাছি কিংবা ছোয়াছুয়ি বা এক্কাদোক্কার বাইরে ফুটবল খেলার আগ্রহ ছেলেদের মতোই চড়া, বেশ অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের নগর পরিকল্পনার দিকে তাকাও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে তাকাও, খেলা বলতে কিন্তু প্রথমত ও প্রধানত ছেলে শিশুদের খেলার কথাই একমাত্র ভাবা হয়। ছেলেবেলার অবাক হওয়ার ধাক্কাটা নিয়ে যথাসম্ভব সচেতন ছিলাম বলেই ২০০২ সালের দিকে মেয়েদের ফুটবল খেলার বিরুদ্ধে ইসলামী ঐক্যজোট বা এমন কারও কর্মসূচিতে অবাক হইনি। বরং খেয়াল করা গিয়েছিল, ওই বছরই ঢাকায় হওয়া মেয়েদের টেনিস খেলার বিরুদ্ধে তাদের কোনো প্রতিবাদ নেই।
সম্ভবত এর ব্যাখ্যা এটাই, ফুটবলের একটা গণমানুষের চরিত্র আছে। এতে যে রকম দাপায়ে বেড়াতে হবে, সেটা পারবে গ্রামীণ কিংবা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরাই, যদি তারা অনর্গল ছেড়ার সুযোগটা পায়। টেনিস অনেক বেশি উচ্চবিত্তদের খেলা। এর কোনো সামাজিক প্রভাব নেই, কাজেই তা নিয়ে মৌলবাদী রাজনীতিও নেই। নিশ্চয়ই সব মানুষের আলাদা আলাদা বেদনা, হতাশা আর বঞ্চিতের বোধ আছে। কিন্তু বেতন দিতে না পারা পরিবারটার বঞ্চনা এত মামুলি অথচ এত স্থুল, এত প্রবল অসহায়… অথচ আমরা নিশ্চিত জানি, এই বিপুল বিত্তহীন শিশুদের মাঝ থেকেই আমাদের ভবিষ্যতের অনেক আশারা বিকশিত হবে অথবা ঝরে যাবে। ফুটবল নিয়ে সেই ফতোয়ার জারিজুরি আজ তেমন একটা নেই। কিন্তু সুযোগ আর সুবিধাটা এখনও এত অপ্রতুল… কতটা বোঝা যায় স্রেফ বেতন দিতে না পারার অপমানে এই শিশুটির মরে যাবার মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে। এত ন্যূনতম কারণে এমন প্রাণঘাতী বেদনা আর অপমান থেকে আমরা কবে মুক্তি দিতে পারব।
লেখক : কলামিস্ট ও রাজনৈতিককর্মী