সঞ্জয় দেবনাথ
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনলাম বাঁশ গাছের পানি খেলে সব রোগ সেরে যায়! এলাকার সব মানুষ ছুটছে বাঁশ গাছের পানি খেতে। ফেসবুকেও বিষয়টা ভালো কভারেজ পেয়েছে। মা ইতোমধ্যেই আমার জন্য বাঁশ গাছের পানি নিয়ে এসেছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই খাচ্ছে এই পানি। দিন কয়েক পরই বোঝা গেল, পুরো বিষয়টাই গুজব। এ দেশে সহজেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যার মতো নারকীয় হত্যাকা-ের ঘটনাও ঘটেছে। কয়েক বছর আগে এক টাকার তামার কয়েন নিয়েও সারাদেশে গুজব ছড়িয়ে অনেক হুলস্থুল হয়েছিল। কোনো কোনো গুজব, অপপ্রচারের ফলে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা সমাজকে অনেক বেশি অস্থিতিশীল করে তোলে। কবি শামসুর রাহমান গুজব ও অপপ্রচারের পিছনে ছোটাকে প-শ্রম হিসেবে উল্লেখ করেছেন তার বিখ্যাত ‘প-শ্রম’ কবিতায়। দেশে বেশিরভাগ গুজব ও অপপ্রচারই ছড়ানো হয় ধর্মকে জড়িয়ে, নয়তো রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়কে ভিত্তি করে। দুটির প্রভাবই মারাত্মক। কেননা দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী ধর্মভীরু হওয়ায়, ধর্মকে ব্যবহার করে গুজব ছড়ালে সহজেই তা প্রভাবিত করে অনেককেই। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই হিংসার দাবানল ছড়াতে পারে, যা চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে সক্ষম। দেশে রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুড়ি তো অনেক পুরনো।
এক্ষেত্রে রাজনৈতিক অপপ্রচার ফ্রাঙ্কেইনস্টাইনের দানবে পরিণত হয়ে তা গিলে ফেলতে পারে আমাদের সুখ ও স্বস্তিকে। তাই গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত সচেতনতার বিকল্প নেই। সবার সচেতনতাই গুজব ও অপপ্রচারের কোমর ভেঙে দিবে। আর যারা গুজব ও অপপ্রচার ছড়ায় তাদের কঠোর, দৃশ্যমান শাস্তি দ্রুততম সময়ে হওয়া একান্ত জরুরি, যাতে এসবে আর কেউ সক্রিয় হতে না পারে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী/ সম্পাদনা : আশিক রহমান