প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির গঠনতন্ত্র পড়তে হবে
বঙ্গভবনে একাধারে ২১ দিন কাজ করে বিএনপির গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়। কাজ শুরু হতো রাত আটটায়, শেষ করতে করতে ভোর হয়ে যেত। আর বিএনপির প্রথম আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান যখন রাজনৈতিক দলের প্রধান হন, তার আগেই তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা শুধু নয়, বলা যায় দেশে একটি বিকল্প রাজনৈতিক ধারার জন্ম দিয়েছিলেন লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান। কিন্তু অনেকগুলো সামরিক ক্যু ব্যর্থ হলেও রাজনৈতিক দল গঠনের মাত্র তিন বছরের মধ্যেই সেনা সদস্যদের হাতেই তিনি নিহত হন।
যদিও বিএনপি টিকে গিয়েছিল এবং ৩৮ বছর পরেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক ধারার একটির নেতৃত্বে আছে। এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যে দল দেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে, তার বিপরীত ধারার নেতৃত্বে শক্ত অবস্থান জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপির।
৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে দলটি। মাত্র কিছুদিন আগে করা বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেছিলেন বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মাত্র দশ বছরের মধ্যে দলটি আবারও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিল নির্বাচনের মাধ্যমেই। কিন্তু এখন আমরা অনেকটাই বিপর্যস্ত দেখছি বিএনপিকে। অনেকে আগ বাড়িয়ে এমনটিও বলেন, ১৯৮১ সালে জিয়া হত্যাকা-ের পর এবং ১৯৮২ সালে এইচএম এরশাদের রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানে সাত্তার সরকার উৎখাত হবার পরও বিএনপি এতটা খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েনি। ২০০৬ সালের পর বিএনপি প্রায় ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে। এমনকি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া সংসদের বিরোধিদলীয় নেত্রীর পদটিও ধরে রাখতে পারেননি। ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম জাতীয় পতাকা ছাড়া তিনি। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া একজন রাজনীতিকের তাই দূতাবাসে গিয়ে মার্কিন পরররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎও তাই সমালোচিত হচ্ছে।
সর্বশেষ যে কমিটি হয়েছে বিএনপির, সেখান থেকে প্রভাবশালী নেতাদের পদত্যাগও নতুন করে বিতর্ক জন্ম দিয়েছে। সঙ্গে আছে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার চাপ। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলের অনেক শুভাকাক্সক্ষীও আজ এই বিষয়ে সোচ্চার। আর ওই যে শুরুতে বিএনপির গঠনতন্ত্র তৈরির একটি বিষয় উল্লেখ করেছিলাম, মহিউদ্দিন আহমদের লেখা ‘বিএনপি সময়-অসময়’ বই থেকে তা দিয়েই শেষ করতে চাই। সর্বশেষ যে চিঠি খালেদা জিয়াকে লিখেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেখানেও আছে গঠনতন্ত্রের কথা। বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি লিখেছেন ‘আমার মনে হয় দীর্ঘদিন আপনি বিএনপির গঠনতন্ত্র পড়েননি এবং আপনার মনোনীত নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্যও তা পড়েননি।’ বিএনপির গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র তৈরির ক্ষেত্রে মাহবুবুল আলম চাষী, ড. এম এ সাত্তার এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রভাব ছিল বলে ডা. জাফরুল্লাহ তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে মহিউদ্দিন তার বইতে লিখেছেন ‘বিএনপির গঠনতন্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন নয়জন। এরা হলেন জিয়াউর রহমান, বিচারপতি সাত্তার, নাজমুল হুদা, হাবিবুল্লাহ খান, আবদুল মোমেন খান, জামালউদ্দিন আহমদ, মওদুদ আহমেদ, আবুল হাসনাত এবং ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী।’
এদের মধ্যে সর্বশেষ যে নামটি সেই অধ্যাপক বি চৌধুরী বিএনপির প্রথম মহাসচিব এবং ২০০১ সালে খালেদা জিয়া দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। তিনি এখন বিকল্পধারার প্রধান। আর ওই ৯ জনের একজন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এখনও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। কিন্তু জাফরুল্লাহর চিঠিতে খালেদা জিয়াকে শুনতে হলো যে তিনি দলের গঠনতন্ত্র পড়েন না। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের এসব বিষয় ভেবে দেখতে হবে বৈকি।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন