কাজী সিরাজ
একসময় দেশে গণতন্ত্র ছিল না বললেই চলে। গণতন্ত্রের মুখে তালা ছিল, একদলের শাসন ছিল। ’৭৫-এর জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। বেশ কয়েক বছর গণতন্ত্র বজায় রেখেছিলেন তিনি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যার পর অনেকবছর স্বৈরশাসকের শাসনে ছিল দেশ। ১৯৯০ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপি অনেক আন্দোলনসংগ্রাম, সভা, সমাবেশ করেছে। এরশাদকে হটিয়ে গণতন্ত্র এদেশে আবারও প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বেগম জিয়াকে তখন আপোসহীন নেত্রী বলা হতো। গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে দলটির ভূমিকাও ছিল অনেক আলোচিত। অনেক বেশি কার্যকর।
তারপর ধীরে ধীরে বিএনপি গণতন্ত্র থেকে অনেকটা দূরে সরে যেতে থাকে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বিএনপি তার আগের চরিত্রটি প্রায় হারিয়ে ফেলে। গণতন্ত্র চর্চা তখন প্রায় ছেড়ে দেয়। দলটির ভিতরে তখন গণতন্ত্রের চর্চাটি আর থাকে না। রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে গণতন্ত্র ভুলুণ্ঠিত হতে থাকে। গণতন্ত্রের যে জায়গাগুলো ছিল, তা আরও শক্তিশালী করা হোক, এমন কোনো নীতিতে বিএনপি ছিল না।
জামায়াতের সঙ্গে জোট করার পর থেকে বিএনপির আরও অধপতন হয়। পরবর্তীকালে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, লড়াই-সংগ্রাম, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকরণে বিএনপি উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কারণ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি রাজনৈতিক দলের যেরকম রাজনৈতিক নেতৃত্ব দরকার হয়। বিএনপির এখন যে নেতৃত্ব, তা কোনো গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব নয়। রাজনৈতিক নেতাদের পলিটিক্যাল চরিত্রের কোনো ভূমিকা দিয়ে তাদের নীতি, সিদ্ধান্ত ও অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারলে সেই দল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে না।
বিএনপির নতুন কমিটি হয়েছে সত্য, কিন্তু কাকে কোন পদ দেওয়া হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। বেগম খালেদা জিয়ার কর্মতৎপরতা দেখে মনে হচ্ছেÑ তারেক রহমানের স্টাফ কর্মকর্তার ভূমিকা পালন করছেন। দলের সন্তুষ্টি অর্জনে কাজ করলে চাকরি থাকবে, না করলে চাকরি যাবে! বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলের কাছে দেশের জনগণ যা প্রত্যাশা করে, তৃতীয়বার ক্ষমতায় যাওয়ার পর তা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে চলা বিএনপির কর্মকা- কোনো রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক কাজ বলা যায় না। দেশে এখন গণতন্ত্রের কোনো চর্চাই নেই। যারা ক্ষমতায় আছে তারাও যে গণতন্ত্র চর্চা করছে, তাও না। গণতন্ত্রের চর্চা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র দেশে চালু রাখার জন্য সরকার, বিরোধীদল ও মানুষের মধ্যেÑ প্রতিটি জায়গাতেই জাগরণ দরকার। এখন সরকার তার মতো করেই কাজ করছে। অন্যদিকে একটা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি জনপ্রত্যাশা মেটাতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। সবসময় একটি ব্যর্থ সরকার নিয়ে আমরা আলোচনা-সমালোচনা করি। বলাবলি করি যে, অমুক সরকার একটি ব্যর্থ সরকার। কিন্তু এই প্রথম একটি বিরোধী দল পেলাম, যারা তার সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালনে হিসেবে ব্যর্থ।
পরিচিতি : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ : শরিফুল ইসলাম
সম্পাদনা : আশিক রহমান