রাজন ও রাকিব হত্যাকারীদের মত রিসার ঘাতকের ফাঁসি হোক
আজাদ হোসেন সুমন: সিলেটের রাজন ও খুলনার শিশু রাকিব হত্যাকারীদের মত স্কুলছাত্রী রিসা হত্যাকারী ওবায়দুলের দ্রুত ফাসির রায় হোক। এটা হওয়া উচিত। কারণ মানুষ নামধারী এই নরপশুটির বেঁচে থাকার অধিকার নেই। সে অধিকার নিজেই খর্ব করেছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদার মতে, পুলিশের দায়িত্ব পুলিশ যথার্থভাবেই পালন করেছে। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমও ছিল সরব। রিসার শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছিল হন্তারককে গ্রেফতারের দাবিতে। দেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিদেশে র্যাব পুলিশ তথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে নেমে ২ দিনের মাথায় নীলফামারী থেকে গ্রেফতার করে। আর একদিন সময় পেলেই সীমান্তের ফোকর গলে ভারতে পাড়ি জমাতো এই ঘাতক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার উচিত দ্রুত এই মামলার ডকেট চার্জশিট হিসেবে আদালতে জমা দেওয়া। নির্ভুল করতে হবে যাতে কোনো ফাঁক ফোকর না থাকে। আলামত তথ্য উপাত্ত সাক্ষ্য সাবুদ আদালতে সময় মত দাখিল ও হাজির করতে হবে। পিপি এপিপি যারা আছেন। সেগুলো ভালভাবে দেখভাল করে আদালতে উপস্থাপন করা। আদালতের বিজ্ঞ বিচারকরা স্পর্শকাতর নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন। এ ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় হবে না বলেই প্রত্যাশা। তাতে ঘাতকের শাস্তি নিশ্চিত হবে। রিসার মা বাবা রিসাকে ফিরে পাবে না কেনোদিন। সন্তান হারানোর বেদনা আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হবে এই দম্পতিকে। রিসার মা যিনি দশ মাস দশ দিন রিসাকে গর্ভে ধারণ করেছেন। নবজাতক থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত যে মা সন্তানকে রোদে পুড়তে দেননি-বৃষ্টিতে ভিজতে দেননি। মেয়ের জ্বর-ঠান্ডা, সর্দি বা সামান্য উপসর্গে বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন। বুকে আগলে রেখেছেন। সেই মা সন্তান হারিয়ে আহাজারি করছেন। রিসার বাবা পুরনো ঢাকার সাধারণ একজন ব্যবসায়ী। স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে সুশিক্ষিত হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মত মানুষ হবে। বাবার সেই স্বাদ আহলাদ, স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। প্রকাশ্যে ঘাতকের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হাসাপতালে ১ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেছে রিসা।
রিসার মা বাবার এখন একটাই চাওয়া ঘাতকের ফাঁসি হোক। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিশ্চিত করে সন্তানহারা এই মা বাবার অবর্ণনীয় বেদনা দূর করবেন। তাতে মেয়েকে ফিরে না পেলেও কিছুটা তারা স্বস্তি পাবেন আর দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে অপরাধ করে ইচ্ছে করেই পার পাওয়া যায় না।
প্রসঙ্গত, খুলনা শিশু রাকিব ও সিলেটের শিশু রাজনের হত্যাকারীরা ধরা পড়েছে। সরকারের প্রশাসনযন্ত্র সর্বোচ্চ তৎপরতায় এদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। আদালতে হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় হয়েছে। সেটা উচ্চ আদালতে আছে। উচ্চ আদালতে রায় দ্রুত শেষে ফাঁসি কার্যকর হোক আর রিসার ঘাতকের ফাঁসির আদেশ ও কার্যকর প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হোক এটাই সবার প্রত্যাশা।
এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোদাব্বির চৌধুরী গতকাল মুঠোফোনে বলেন, আসামি যেহেতু স্বীকার করেছে সেহেতু বিচারকাজে কোনো অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি যতœসহকারে আদালতে উপস্থাপন করতে পারলে হত্যাকারীর সাজা নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে স্কুল-কলেজে যাতায়াতের পথে কোমলমতি ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতে বখাটেরা ভয় পাবে। সম্পাদনা : ইসমাঈল হুসাইন ইমু