ফারাক্কার ক্ষতি ঠেকাতে যৌথ ব্যারেজ নির্মাণ করতে চায় বাংলাদেশ
গাজী মিরান: সম্প্রতি ভারতের বিহারে বন্যার কারণে ঐ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধ সরিয়ে নেওয়ার দাবি করেছেন। বিহারে বন্যার প্রকোপ কমাতে তিনি এ দাবি জানান। তবে তার এ দাবির পর তা নিয়ে বাংলাদেশেও ব্যপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিহারের বন্যার পানি সরাতে ফারাক্কার সব কয়টি গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি আসার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
তবে এমন খবর সঠিক নয় উল্লেখ করে বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী বলেছেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে ফারাক্কার সব গেট খোলা থাকে। শুষ্ক মৌসুমেও সব গেট খোলা রাখার পক্ষে বাংলাদেশ। বিবিসি বাংলার এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ঐ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে কোনো বক্তব্য ছিল না। তবে এক প্রশ্নের জবাবে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহামুদ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানিসংকটের কারণে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে পানি পাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কার সব গেট খোলা রাখার পক্ষেও বাংলাদেশ সরকারে অবস্থান রয়েছে।
মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, এর সঙ্গে পদ্মা নদীতে পানি ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতের সহায়তায় একটি ব্যারেজ নির্মাণের চিন্তা করছে।
তিনি আরও বলেন, গঙ্গায় একটা ব্যারেজ করে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে গড়াই নদীর মধ্য দিয়ে আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে পানি দিতে হবে এবং আমরা চাই এ ব্যারেজটা ভারতের সাথে যৌথভাবে করতে। কারণ পানিটা আসে ভারত থেকে এবং ব্যারেজে পানি ধরে রাখতে হবে পাংশি নদীতে উপরে প্রায় ১৬৪ কিলোমিটার নদীর মধ্যে। যে নদীর একপাশ ভারত এবং অন্য পাশ বাংলাদেশের। সুতরাং ভারতকে নিয়ই এই ব্যারেজটা করতে হবে। এবং আমি মনে করি এ ব্যারেজটা নির্মাণ করতে পারলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে।
এছাড়া তিনি বলেন, গঙ্গা, যমুনা নদীর বেসিনে যে সমস্যা রয়েছে সেই সমস্যা সমাধানেরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ নিয়ে ভারতসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে আলোচনাও চলছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে চার বিলিয়ন ডলারের গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে। গত সপ্তাহে এ প্রকল্পের সম্ভাব্য জায়গাগুলো পরিদর্শন করবে চীনা প্রতিনিধি দল। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের তিনভাগের এক ভাগ অঞ্চল সারাবছর সবুজ থাকবে। ২ দশমিক ৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি যুক্ত হবে বাজেটে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে জাপান ও ভারত সহায়তা করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে রাজবাড়ীর পাংশায় ব্যারেজ নির্মিত হবে। ফলে পাংশা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাকা পর্যন্ত পুরো পদ্মা নদী এবং এর শাখা নদীগুলো সমন্বিয়তভাবে জলাধারে পরিণত হবে। ফলে সারা বছর সেচের জন্য পানি পাওয়া যাবে। এতে পানি চুইয়ে মাটির নিচে যেতে পারবে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের উন্নতি হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সুন্দরবন এলাকায় যে লবণাক্ত পানি বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে তার উন্নতি হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আর একটি পদ্মা ব্রিজ তৈরি হবে। এর সঙ্গে একটি রেল সেতু তৈরি হবে। এ ব্যারেজ থেকে ১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ফলে এ অঞ্চলের অন্তত তিন জেলার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হবে। গঙ্গা ব্যারেজের বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজও হাতে নেওয়া হবে। এ প্রকল্প প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে পেশ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে তিন জেলার নয় উপজেলায় কৃষি উৎপাদন বাড়বে। প্রকল্পের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর জন্য অনেক জলাধার নির্মাণ করতে হবে। তবে এর আগেই এ এলাকার ছোট নদীগুলো বিশেষত বড়াল এবং মুসা খাঁর মতো নদীগুলোর নাব্য বৃদ্ধির জন্য আর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আগামী দেড় বছরের মধ্যে নদী এবং খাল কাটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
ভূ-উপরস্থ পানি সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের জন্য মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বর্তমানে প্রি-একনেকে রয়েছে। রাজশাহী নগরীর বুলনপুরের পাসের পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণের কাজ আগামী শুষ্ক মৌসুমে শুরু হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪০-এর দশকে কাজ শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। ৬০-এর দশক থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পাড় নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে এখনও চলছে। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে নদীর পাড় বাঁধার কোনো জায়গা থাকবে না। এখন যে কাজ করা হচ্ছে সেটি ভূ-উপরস্থ পানি সংরক্ষণ এবং সেচের কাজ। এর আওতায় নির্মিত হচ্ছে গঙ্গা ব্যারেজ। ফলে দেশের তিন ভাগের এক ভাগ ভূমি সারা বছর সেচের আওতায় আসবে। ফলে এ এলাকার কৃষি উৎপাদন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখবে। তথ্যসূত্র: বিবিসি ও জনকণ্ঠ। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম