জিয়ার একমাত্র জীবিত ভাই বলেছেন ‘আমার রাজনীতি করার ক্ষমতা নেই’
আরিফ: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন বাবা-মায়ের পাঁচ ছেলের মধ্যে দ্বিতীয়। তার কোনো বোন নেই। তার বাবা মনসুর রহমান এবং মা’য়ের নাম জাহানারা খাতুন ওরফে রানী। জিয়ার বড় এক ভাই ও ছোট তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট আহমেদ কামালই এখন জীবিত। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। জিয়ার দুই সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছেন। বড় ছেলে তারেক রহমান লন্ডনে ‘চিকিৎসা’ নিচ্ছেন। জিয়াউর রহমানের বড় ভাই, তৃতীয় ও চতুর্থ ভাই মারা গেলেও তাদের সন্তানরা আমেরিকা-ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
দল করছেন না আহমেদ কামাল
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে কথা হয় আহমেদ কামালের সঙ্গে। বাসাবোর বাসায় যেতে চাইলেও তিনি প্রতিবেদককে নিষেধ করেন। বলেন, ‘আমি খুব অসুস্থ।’ গত ৫ মার্চ গণমাধ্যমে নতুন দল করার ঘোষণা দিলেও বলেন, ‘আমি কোনো দল করছি না। রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা নেই, ক্ষমতাও নেই।
আহমেদ কামাল পর্যটন করপোরেশনের জিএম হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান। সে থেকে তিনি বাসাবোর একটি বাসায় একা বসবাস করছেন। গৃহকর্মী তার রান্না ও ঘর ধোয়ামোছার কাজ করে দেন বলে জানান আহমেদ কামাল।
চলতি বছরের মার্চে একাধিকবার আহমেদ কামাল নতুন দলের বিষয়ে তথ্য দিয়েছিলেন। নতুন দল করার প্রসঙ্গে ওই সময় আহমেদ কামাল বলেছিলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আদর্শ, বিপন্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক নিয়ে আমি আসব। আমি ডাক দেব।’ তার ভাষ্য ছিল, ‘দেশে অরাজকতা চলছে। এই অরাজকতা বন্ধে নতুন দলের মাধ্যমে জনগণের সামনে হাজির হব।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো অভিমত আছে কিনা জানতে চাইলে আহমেদ কামাল বলেন, ‘কী বলব, আমি তো দলের কেউ নই। নেতাকর্মীদের বলব, বিএনপিকে শক্ত হাতে ধরে রাখতে হবে। বিএনপি ছাড়া রাজনীতি. . . বলতে পারি না। গলায় সমস্যা হয়।’ এইটুকু বলেই থেমে যান আহমেদ কামাল।
জিয়ার তিন ভাইয়ের পরিবার বিদেশে স্থায়ী, নেই যোগাযোগ। পরিবারের বিষয়ে আহমেদ কামাল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ছাড়া বাকি তিন ভাই বিদেশে স্থায়ী ছিলেন। বড় ভাই রেজাউর রহমান নেভিতে কাজ করে বিদেশে চলে গেছেন। তৃতীয় ভাই মিজানুর রহমান ব্যাংকার ছিলেন। ইংল্যান্ডে স্থায়ী বসবাস করছে তার পরিবার। তিনিও বেঁচে নেই। ছোট ভাই খলিলুর রহমান ফার্মাসিস্ট। এই তিনজনের মধ্যে একজনের পরিবার ইংল্যান্ডে ও দুজনের পরিবার আমেরিকায় বসবাস করছেন।’
তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয় না উল্লেখ করে আহমেদ কামাল ভাঙা-ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘না, ওরা সময় কোথায় পায়? ওদের ওখানে যখন দিন, আমাদের এখানে রাত। হয়তো সময় পায় না।’
আহমেদ কামাল বলেন, ‘আমার বাবা মনসুর রহমান বড় চার ভাইয়ের নাম রেখেছেন। আর আমার নামটি রেখেছেন দাদা। আমার নামের শেষে রহমান শব্দটি নেই।’
জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে তারেক রহমানের পক্ষ থেকেও কোনো যোগাযোগ করা হয় না বলে জানান আহমেদ কামাল। তিনি বলেন, ‘সবাই ব্যস্ত। তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে লন্ডনের একটি বাড়িতে থাকছেন তিনি।’
জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। গত বছর তিনি মারা যান মালয়েশিয়ায়। তার ঘরে দুটি সন্তান আছে। কোকোর স্ত্রীসহ তারা মালয়েশিয়াতেই বসবাস করছেন।
আহমেদ কামাল বলেন, ‘একমাত্র জিয়াউর রহমান ছাড়া জিয়া পরিবারের কেউ-ই রাজনীতিতে জড়াননি। আর জিয়াও চাইতেন না, তার পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে জড়াক। যদিও জিয়ার স্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার পরিবারের ভাই-বোনকে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত করেছেন।’ এমনকি খালেদা জিয়ার মা তৈয়্যবা মজুমদার জিয়া সরকারের সময়ে ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন বলেও দাবি করা হয়েছে কোনো কোনো সূত্রে।