কোন পথে হাঁটবেন মোদি
নূসরাত জাহান : ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরে একটানা ৫০ দিন কারফিউ ছিল। কয়েকদিন হলো, তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত সরকার। কাশ্মীরের জন্য কারফিউ নতুন কিছু নয়। কাশ্মীরের চলমান সংকট নিয়ে সরকার এবং জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলো নমনীয় না হওয়াতেই সংকট দীর্ঘায়িত হয়েছে। কাশ্মীর সংকট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। তাকেই স্থির করতে হবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন নাকি বিজেপির প্রধানমন্ত্রী হবেন।
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তিন দশক আগে কৌশলে জম্মু ও কাশ্মীরে কংগ্রেসের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর হয়েছিলেন। কাশ্মীরের স্বার্থ তো দূরের কথা দেশের স্বার্থও তার হিসেবের মধ্যে ছিল না। ইন্দিরা গান্ধী নিজেকে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। পরিণামে উপত্যকায় অশান্ত হয়ে ওঠেছে। মোদিও সেই পথেই হাঁটছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) আমলে কংগ্রেসি শাসকদের তুলনায় মোদি সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও বিজেপির প্রধান মনমোহন সিং কাশ্মীর প্রশ্নে শাস্তির পথে হাঁটতে চাইলেই বিজেপি আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে না এমন না। ভোটের রাজনীতিতে সেই আক্রমণের আতঙ্ক অগ্রাহ্য করা ইউপিএ-র পক্ষে সম্ভব ছিল না। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি প্রধানও সেই পথে অগ্রসর হলে কংগ্রেসের পক্ষে বড় বাধা সৃষ্টি করা কঠিন।
কিন্তু বোঝাপড়ার পথে রণং দেহি হুঙ্কার চলে না, প্রতিপক্ষের সহিত খোলা মনে কথা বলিতে হয়, বিক্ষুব্ধ মানুষের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য সৎ উদ্যোগ লইতে হয়, ক্ষুদ্র ও তাৎক্ষণিক লাভের অঙ্ক ভুলিয়া বৃহৎ ও দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণের কথা ভাবিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক দিনে তেমন কিছু ইতিবাচক সংকেত দিয়াছেন বটে, কিন্তু অনেক বিলম্বে, এবং এখনও তাহাতে যথেষ্ট জোর খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। তাঁহার সহকর্মীদের আচরণ তাঁহাকে সাহায্য করে নাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ কাশ্মীরে ‘সকলের সহিত’ কথা বলিবার উদার আহ্বান জানাইয়াছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট করিয়া কাহাকেও ডাকেন নাই। ফলে তার দুই দুই বার উপত্যকা সফরে শুধু যাওয়া-আসা সার হইয়াছে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জম্মুতে গিয়া বক্তৃতা দিয়া আসিয়াছেন যে, পাকিস্তানের যড়যন্ত্রে কিছু দুষ্ট লোক কাশ্মীরে ঢিল ছুঁড়িতেছে! এই বক্তৃতায় জম্মুতে বিজেপির ভোট বাড়তে পারে, কাশ্মীর সমস্যা বিশ বাঁও হইতে চল্লিশ বাঁও জলে চলিয়া যাইবে।
রাজনাথ সিং কাশ্মীর পরিস্থিতির তল পাবেন না। কিংবা অরুণ জেটলি দলীয় প্রচারের বাইরেও বের হতে পারবে না। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নরেন্দ্র মোদিও কী, সংঘ পরিবারের প্ররোচণায় মনে করেন কাশ্মীরে ‘জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠা করাই তার পবিত্র কর্তব্য?
কাশ্মীর ইস্যুর সদুত্তর চাইলে দলীয় চশমা সিন্ধুনদে ছুঁড়ে ফেলে প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনার টেবিলে যেতে হবে। আলোচনার টেবিলেও সব পক্ষকে আনতে হবে। তবেই না আসবে কাঙ্ক্ষিত সমাধান। আর আলোচনায় যদি কোনো পক্ষ আসতে আপত্তি জানায়, তাহলে তা দূর করা রাষ্ট্রের কাজ। কারণ, কাশ্মীরের স্বাধীনকামীদের বাদ দিয়া সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।
ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সব পক্ষকে আলোচনায় যুক্ত করলে ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডির দুরভিসন্ধিকে প্রতিহত করাও তুলনামূলক সহজ হবে। কারণ কাশ্মীর অশাস্ত থাকলে সেই ক্ষোভের বারুদকে কাজে লাগাবে পাকিস্তান। সুযোগ সন্ধানীরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা চালাবেই। আর এই বিষয়টি মোদির বোঝা দরকার। কারণ তিনি পুরো ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাই কাশ্মীরের ভালো-মন্দের ভারও তার। কাশ্মীরের জনগণকে বাইরে রেখে পার্লামেন্টে ‘কাশ্মীর আমাদের’ বলে শুধু হুঙ্কার ছাড়লে সবকিছু উদ্ধার হবে না। সূত্র: এনডিটিভি। সম্পাদনা : রিকু আমির