শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে কতদিন টিকবে আইএস?
অনির্বাণ বড়ুয়া: গত মঙ্গলবার ইসলামি স্টেট গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় নেতা আবু মোহাম্মাদ আল আদনানী যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত একটি ড্রোন আক্রমণে নিহত হন। আইএসের নিজস্ব মিডিয়া আমাক বিষয়টি নিশ্চিত করে। আদনানী ২০১০ সালের পর থেকে সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আদনানী নিহত হয় আল-বাব শহরে যেটিকে রাক্কার পর আইএসের নিয়ন্ত্রিত সবচেয়ে শক্তিশালী শহর বলে বিবেচনা করা হতো। আদনানী গত পাঁচ বছর থেকে আইএসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে বিবেচিত। তাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে রাশিয়াও। আদনানী হত্যার বাহবা যার ঝুলিতেই যাক না কেন, এ মৃত্যুতে যে আইএসের নেতৃত্বে একটি শূন্যতা তৈরি হবে সেটি অনুমেয়।
আদনানীর সত্যি নাম তাহা সুভি ফাল্লাহা। যিনি সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইদলিব প্রদেশের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় আদনানীসহ কিছুসংখ্যক জঙ্গি মিলে আইএস প্রতিষ্ঠিত করেন।
ইরাকি বংশোদ্ভূত আইএস বিশেষজ্ঞ খালেদ আল কায়েসী মনে করেন মৃত্যুর আগে এসব নেতাকে অনেক ধরনের দায়িত্ব দেওয়ার কারণ হচ্ছে আইএস বড় পদ তাদের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত নেতা ছাড়া কাউকে দেয় না। আদনানী ছিলেন জঙ্গি সংগঠনটির মুখপাত্র, একই সঙ্গে তিনি ছিলেন জেনারেল এমির ও সিরিয়া থেকে পরিচালিত বিদেশে অপারেশনগুলোর ইনচার্জ।
গত ১ জুলাই বাংলাদেশের গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলাটিও এই আদনানীরই পরিকল্পনা বলেও খবর এসেছে। নিঃসন্দেহে আদনানী যেসব পদে ছিলেন সেগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ ও এসব বিষয়ে আইএস তার সবচেয়ে পরীক্ষিত সৈনিককেই দায়িত্ব দেবে। বিবিসির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আদনানীর দায়িত্ব পেতে পারেন তিরাদ আল জারবা, যিনি জন্ম গ্রহণ করেন সৌদি আরবে ও তার জন্ম নাম আবু মুহাম্মাদ আল শিমালী। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে জারবা আইএসের বৈদেশিক অপারেশনের দায়িত্ব পেতে পারেন।
জারবা বর্তমানে আইএসের ইমিগ্রেশন ও লজিস্টিক কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। জারবার বিষয়ে তথ্য চেয়ে মার্কিন সরকার অনেক আগেই পাঁচ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন। একই পরিমাণ পুরস্কার ছিল আদনানীর উপরও। এ থেকেই বুঝা যায় এ দুজনই আইএসের খুব গুরুত্বপূর্ণ নেতা। মার্কিন সূত্রে জানা যায় জারবা ইরাক যুদ্ধের সময় আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আইএসের নেতাদের এক পদ থেকে অন্য পদে নেওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। ইতিপূর্বে আবু আলী আল আনবারীকে মসুলের আল আফারের প্রচারকের দায়িত্ব থেকে অবসর দিয়ে আইএসের অর্থনৈতিক বিষয়াদি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আনবারী গত মার্চে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তে এক মার্কিন আক্রমণে নিহত হন।
আইএসের নিয়ন্ত্রিত এলাকা কত বড়?
২০১০ সালে ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করার পর আইএস ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল মিলিয়ে যুক্তরাজ্যের আকারের একটি অঞ্চল দখল করে। চতুর্মুখী আক্রমণের কারণে তাদের নিয়ন্ত্রিত যায়গা হারাতে থাকে। গত দুবছরে আইএস তাদের অর্ধেক যায়গা হারায়। তবে এখনও আইএসের নিয়ন্ত্রিত যায়গার পরিমান গ্রিসের মোট আয়তনের সমান। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫-৬ সালের পর বর্তমান সময়ে আইএস সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছে। একের পর এক শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুতে এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা আইএসের জন্য কঠিন হবে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
এদিকে আইএস ইতোমধ্যেই তাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির নেতাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। নেতৃত্বের এ স্থানান্তরের প্রক্রিয়া আইএসের ওপর বিরূপ প্রভাব রাখবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। অনেকে মনে করছে নতুন এসব নেতৃত্বে আইএস আরও শক্তিশালী হবে। কারণ এসব নেতা তৈরি হয়েছেন ইরাক যুদ্ধ ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে। যারা পরে স্থানীয় ও বৈশ্বিক এজেন্ডা নিয়ে কাজ করেছে।
ধারণা করা হচ্ছে মসুল ও রাক্কাসহ আইএসের দখলে থাকা বাকি যায়গা মুক্ত করতে পূর্বের অর্ধেকের চেয়ে কম সময় লাগবে। তবে এরা বেশি ভোগাতেও পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম