‘আপসহীন নেত্রী’ খালেদা জিয়ার করুন দশা একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত
আজাদ হোসেন সুমন: ভুলের শুরুটা হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করা ঘোষণার মধ্যদিয়ে। সেটা সম্প্রতি গঠিত কমিটি পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। খালেদা জিয়ার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তে বিএনপি দিন দিন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে অস্তিত্ব এখন বিলীন হবার পথে। বিএনপির এখন ভুল শুধরে উত্তোরণের পথ খুঁজতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কোনো আন্দোলন জমাতে পারছে না বিএনপি। কাজে লাগাতে পারছে না কোনো ইস্যু। এমনকি সরকার খালেদা জিয়াকে আন অফিসিয়ালি গৃহবন্দি করে রাখা থেকে শুরু করে সেনানিবাসের বাসভবন, বিমানবন্দরের নামকরণ, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক কেড়ে নিলেও দলটি কিছুই করতে পারছেনা। এক কথায় বিএনপি এখন বিবৃতি আর প্রেস রিলিজ সর্বস্ব রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। ‘সেই নব্বই দশকে চল চল ঢাকা চল’ খ্যাত আপসহীন নেত্রীর এখন করুণ দশা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত ঘোষণা দিলেও সরকার নির্বাচন করতে সক্ষম হয়। রাজপথে আন্দোলন করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয় বিএনপি। এরপর জামাতের মদতে বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে। সরকার কঠোর হস্তে দমন করলে ভেস্তে যায় জামাত বিএনপির মিশন। এরপর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেও সকাল ১১টায় তারা নিজেদের উথড্র করে। ফাঁকা মাঠে গোল দেয় আওয়ামী লীগ। আর দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি।
সম্প্রতি বিএনপির বহুল প্রত্যাশিত কমিটি গঠনের পর উচ্ছ্বাস প্রকাশের পরিবর্তে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সামাজিক কমিটি ঘোষণার পর এরই মধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ পাওয়া মোসাদ্দেক আলী ও সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। তবে বিএনপির জন্য আরও দুঃসংবাদ হয়ে আসছে যা, তা হলো ক্ষুব্ধ হয়ে ২৪ জনেরও বেশি নেতা বিএনপির রাজনীতিকে বিদায় জানাচ্ছেন। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এই ইঙ্গিত দিয়েছে। কমিটির সমালোচনা করে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেছেন, তাদের শঙ্কা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার হাতে একক ক্ষমতা দেওয়া হলেও তাকে প্রভাবিত করে কমিটি গঠনের কাজ হয়েছে। কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছেও এ বিষয়ে তেমন তথ্য ছিল না। তারা সবচেয়ে যে বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেটি হচ্ছে, কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। অনেক জুনিয়র নেতা সিনিয়রের চেয়ে উপরের পদ পেয়েছেন। অনেকে আগের কমিটিতে যে পদে দায়িত্ব পালন করেছেন নতুন কমিটিতে তার চেয়ে নিচের পদ পেয়েছেন। এতে অনেকেই অসম্মানিত বোধ করছেন। অনেকেই বলছেন বিএনপির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কমিটি দিয়ে সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করা হলেও বেশির ভাগ নেতাই ক্ষুব্ধ। আর ত্যাগীদের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও হতাশ। বিতর্কিত এই কমিটি দিয়ে ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালানো কঠিন হবে বলেও মনে করছেন তারা। এমনকি খালেদা জিয়ার ঘোষিত রূপকল্প ২০৩০-এর বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পড়বে এই কমিটির জন্য।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কমিটির কলেবর বৃদ্ধি হয়েছে- নতুন পদ পেয়ে অনেকেই চাঙ্গা হয়েছে। নেত্রী এখন করণীয় নির্ধারণ করবেন। আশা করছি দলের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে। কারণ এই সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস শুরু হয়েছে। সরকারের পায়ের নীচে মাটি সরে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির সমর্থকরা নীরব বিপ্লব ঘটায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপিকে মানুষ সমর্থন দিবে।
শুধু তাই নয় সরকার এখন লুই আই কানের নকশা এনেছে। সেই নকশা অনুযায়ী সেখানে জিয়াউর রহমানের কবর থাকার কথা নয়-সরকার সেই কবর সেখান থেকে সরানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে- হয়তো সরিয়েও দেবে শিগগিরই। চেয়ে চেয়ে দেখবে বিএনপি। এই যে বিএনপির ত্রাহিমধুসূদন অবস্থা এটা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বা দেশের সাধারণ মানুষের কাম্য নয়। কারণ একটি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সমৃদ্ধি জাস্টিফাই করতে হলে সরকারের পাশপাশি একটি শক্তিশালী বিরোধী দলও থাকা প্রয়োজন। সেটা বিলীন হচ্ছে সরকার একা একা ফাঁকা মাঠে গোল দিচ্ছে। সরকার দেশকে যতই উন্নতির শিখরে নিয়ে যাকনা কেন গণতন্ত্র নামের সোনার হরিণটি অধরা থেকে যাচ্ছে। বিএনপি বিরোধী দল থেকে ছিটকে পড়ছে।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ভুল শুধরাতে হবে খালেদা জিয়াকেই গোয়ার্তুমি না করে মাথা ঠা-া রেখে প্রবীন নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, অগ্রসর হতে হবে, উত্তোরণের পথ খুঁজতে হবে। তা না হলে ভুলের ধারা অব্যাহত থাকলে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি অতলগহ্বরে নিমজ্জিত হবে যেখান থেকে টেনে তোলাটা দুসাধ্য হবে। সেটা কারো কাম্য নয়। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম