প্রতিদিন ৩০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের নতুন রেকর্ড
রিকু আমির: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা জুলাইকেও ছাড়িয়ে গেছে আগস্ট মাসে। জুলাই মাসে প্রতিদিন গড়ে ২৩ জন করে আক্রান্ত হলেও আগস্ট মাসে এই সংখ্যা ৩০-এ দাঁড়িয়েছে। মাসভিত্তিক হিসাবে ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত আগস্টেই।
চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু আক্রান্তের হার দেখে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। কেননা, অন্য বছরের চেয়ে এবারের হার শুরু থেকেই বেশি। জুন থেকে এ পর্যন্ত যে হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও শঙ্কিত।
তথ্য অনুযায়ী- মে মাসে ৪৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও জুন মাসে সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পায় (১৭২ জন)। জুলাই মাসে মে মাসের চেয়ে বৃদ্ধি পায় ১৩ গুণেরও বেশি (৬৫৪)। আগস্ট মাসে মে মাসের চেয়ে বৃদ্ধি পায় সবচেয়ে বেশি, সাড়ে ১৮ গুণেরও বেশি।
জানা যায়, গত জানুয়ারি থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সেল সূত্র জানায়, জুন মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পপি (১৫), শামীম (২৩), সাইফুন্নাহার ও কাজী রোকসানা (৩২) ও জুলাই মাসে কাকন (১৩)-র মৃত্যু হয়। পপি ও শামীম ঢামেক হাসপাতাল, সাইফুন্নাহার স্যার সলিমুল্লাহ মিটফোর্ড হাসপাতাল, কাজী রোকসানা সেন্ট্রাল হাসপাতালে এবং কাকন ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুবরণ করেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাকেন্দ্রের (আইইডিসিআর) তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য সূত্র অনুসারে, বাংলাদেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব তীব্র হয়। তখন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কেবল সরকারের সংগৃহীত তথ্য মতে দেশে ২৮ হাজার ১০১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ২৪২ জন। এর মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল প্রথম পাঁচ বছর। ২০০০ সালে পাঁচ হাজার ৫৫১ জন আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৯৩ জন; ২০০১ সালে দুই হাজার ৪৩০ জন আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৪৪ জন; ২০০২ সালে ছয় হাজার ১৩২ জন আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ৫৮ জন। ২০০৩ সালে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসে। সে বছর আক্রান্ত হয় ৪৮৬ জন এবং মারা যায় ১০ জন।
তবে এরপর পরিস্থিতি ফের খারাপ আকার ধারণ করে। ২০০৪ সালে আক্রান্ত হয় তিন হাজার ৯৩৪ জন, মারা যায় ১৩ জন; ২০০৫ সালে আক্রান্ত হয় এক হাজার ৫৮ জন, মারা যায় চারজন এবং ২০০৬ সালে আক্রান্ত হয় দুই হাজার ২০০ জন, মারা যায় ১১ জন। এর পর থেকে টানা চার বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যুর রেকর্ড নেই সরকারি হিসাবে। যদিও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী প্রতিবছরই ছিল। কাছাকাছি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০১১ সালে। সে বছর এক হাজার ৩৬২ জন আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ছয়জন। সম্পাদনা: দীপক চৌধুরী