
বাংলাদেশ উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শেষ
অন্যদিকে মাত্র ৬% অবদানকারী সরকারি কর্মকর্তারাই মানবসম্পদ উন্নয়নের সিংহভাগ খরচ করেন। এই বরাদ্দ সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ খরচের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ‘কর্মবান্ধব শিক্ষার’ প্রসার ঘটাতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সকলক্ষেত্রে (সরকারি ও বেসরকারি) সমন্বয়ের মাধ্যমে কারিকুলাম, প্রশিক্ষক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং গরিবদের জন্য সহায়তা একই নীতিমালার অধীনে বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ’ কর্মসূচি আজও প্রশাসনিক জটিলতা ও কিছু সংখ্যক আমলাদের প্রতিবন্ধকতায় বেশি দূর এগোতে পারেনি। সরকারকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে এসব বাধা সৃষ্টিকারীদের সকল অপেশাদারী চক্রান্ত রুখে দাঁড়াতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে অন্য খাতগুলোর মতো স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সরকারকে নিতে হবে।
২০১৬ সালে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা, যোগাযোগ এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট এখনও পুরোপুরি কাটেনি। তবে চলমান কার্যক্রম ও পরিকল্পনাগুলো অনেক আশার সঞ্চার করেছে। আমার বিশ্বাস এ উন্নয়নধারা অব্যাহত থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে অপ্রতিরোদ্ধ। কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন আমাদেরকে নতুন একটি অবস্থান তৈরি করেছে। আমাদের উন্নয়নের শিকড় এখন খুবই শক্ত। যুবসমাজের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই উন্নয়ন ধারাকে অনেক গতিশীল করতে পারে। ২০১৬ সাল আমাদের জন্য অনেক প্রত্যাশার বছর। এ বছর আমাদের উন্নয়ন অনেক, গতিশীল হবে। স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন (উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন কাউন্সিল এবং জেলা পরিষদ) এই বছরেই সম্পন্ন হবে আমাদের আশা। সরকারি আমলা বা মনোনীত প্রতিনিধিদের বদলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ নিশ্চিত করা হবে। দেশে ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠায় সরকার সচেষ্ট। ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের শক্ত হাতে দমন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের দমনে সরকার সচেষ্ট। আমার ধারণা সার্বিকভাবে নিম্নলিখিত উন্নয়ন খাতগুলোতে উল্লম্ফনের আশা করি ২০১৬ সালে।
হ বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন
হ যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক সম্প্রসারণ কার্যক্রম
হ বস্ত্র ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে নতুন বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণ
হ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ
হ প্রবাসী রেমিটেন্স বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে
হ কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি
হ মুলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধি
হ আমদানি ও রপ্তানি খাতে ব্যাপক বৃদ্ধি
হ ঢাকাকে যানজট মুক্ত করার ব্যাপক কর্মযগ্যে বাস্তবায়ন শুরু
হ মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি
হ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অটোমেশনে গতি সঞ্চার
হ সমুদ্র সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি ও বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইলেও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার ৬ বৎসর পরও বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি চলতি বৎসরে ৩.১% এবং আগামী বৎসর ৩.৬% হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। চীনের চলতি বছরের প্রবৃদ্ধি গত ২৫ বৎসরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৬.৩% হারে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ২.৬% হবে বলে আইএমএফ রিপোর্টে বলা হলেও ইউরোপের প্রবৃদ্ধি ১.৫% হবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। সার্বিকভাবে এসব পূর্বাভাসকে বিবেচনায় নিয়েই উদীয়মান অর্থনীতিগুলোকে রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলার লক্ষ্যে ‘সিট বেল্ট লাগানোর (‘ঋধংঃবহ ঝবধঃ ইবষঃং’) জন্য সর্তক করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা, দ্বন্দ এবং ধর্মের অপব্যবহার করে সার্বিক অর্থব্যবস্থাকে অস্থির করে তোলা হচ্ছে বলেই এই সতর্কতা। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধি ও ২০১৬ সালে নতুন গতি দিতে সক্ষম হবে এবং ২০২১ সালে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্থান করে নিবে। আমাদের সকলের কর্ম, চিন্তা ও পরিশ্রমের ভিত্তি সমুদ্র হবে ২০১৬ সালে।
সম্পাদনা: জব্বার হোসেন
