আবু আহমেদ
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় ৩৫ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং বাকি কাজ খুব গতিতে এগিয়ে চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চল তথা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ভালো সংবাদ। মানুষ অপেক্ষায় আছে, এই সেতু কবে শেষ হবে।
পদ্মাসেতু প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদী। যারা প্রকল্পটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন, প্রকল্পটি যথাসময়ে শেষ হয়। কারণ, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা জানি, দেশের বড় বড় প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হয় না, যার ফলে খরচও অনেকগুন বেড়ে যায়। এই সেতুর খরচও প্রথম দিকে কম ছিল, এখন দিগুনের চেয়েও বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। অনেকসময় বড় বড় প্রকল্পের খরচের স্বচ্ছতা কম থাকে। এসব বড় প্রকল্পে জড়িত সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজের খরচের বিষয়টি স্বচ্ছ থাকতে হবে। অনেক সময় প্রকল্পে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকার দেশের অর্থ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনে এগিয়ে গেছে। সরকারি এই সিদ্ধান্ত এখন ইতিবাচক বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুই দেশের প্রথম মেগা প্রকল্প, যা আমরা নিজের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা আসার পর বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছিলেন, এ ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের অর্থ ব্যবহার করলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, সেরকম কোনো নমুনা কী আমরা দেখছি অর্থনীতিতে?
পদ্মা সেতুর কাজের অভিজ্ঞতা আগামীতেও কাজে লাগাতে পারবে সরকার। বাংলাদেশে অর্থের কোনো অভাব নেই, সুতরাং বড় ও মেগা প্রজেক্ট নিজেদের অর্থায়নে করা সম্ভব। ২০-২৫ বছর আগে এমন পরিস্থিতি ছিল না। পর্যাপ্ত অর্থের যোগান আমাদের ছিল না বলেই বিদেশের কাছে ঋণের জন্য ধর্না দিতে হতো।
নিজস্ব অর্থায়নে বড় কোনো প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের আর্থিক বাজারগুলো ব্যবহার করতে হবে। সরকার সুদবিহীন বন্ড মার্কেটে ইস্যু করেও আর্থিক সহায়তা পেতে পারে। দেশে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার শেয়ার বাজারে ছেড়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ যায়। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণ সংগ্রহ থেকে সরকারের সরে আসা উচিত। আমরা তো দেখিয়েছি, আমরা পারি। নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মাসেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। পদ্মাসেতু তো এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। বাস্তবতা এখন তা-ই।
পরিচিতি: অর্থনীতিবিদ
মতামত গ্রহণ: শরিফুল ইসলাম / সম্পাদনা : আশিক রহমান