রাশেদা কে. চৌধুরী
রিসা ও তনু হত্যার মতো বিষয়গুলো পুরো সমাজেরই দেখা উচিত। যেভাবেই আমরা বলি না কেন, নারী নির্যাতন কমছে না। বাংলাদেশ বিশ্ব সমাজের কাছে নারীদের প্রতি যেকোনো রকম বৈষম্য, যেকোনো ধরনের সহিংসতা রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তারপরেও কঠিন যে বাস্তবতাটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না বরং নানারূপেই ছড়িয়ে আছে। যেটা দেখছি, নানারূপের মধ্যে একটা হলোÑ অল্প বয়স্ক বা কিশোরীদেরকে ইভটিজিং করা হচ্ছে। যেটাই বলি, যেভাবেই বলি, যে নামেই বলি, সহিংসতারই নানাধরনের রূপ। এটা কমছে না কেন? সেটাতো সমাজবিজ্ঞানীরা, গবেষকরা অনেক ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু মোটামুটিভাবে আমরা যেটা বলতে পারি, এর একটা বড় কারণ হচ্ছেÑ মূল্যবোধের বিশাল অবক্ষয়। মানুষকে তো মানুষই মনে করছি না, বিশেষ করে নারী ও শিশুকে মর্যাদা বা তাদের অধিকারের জায়গাটা দিতে পারছি না।
সমাজে শিশু নির্যাতনও কম হচ্ছে না। কারণ, ওই যে মূল্যবোধের অবক্ষয়। দ্বিতীয় হচ্ছেÑ নতুন প্রজন্মের মধ্যে, তারুণ্যের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ও অশান্ত মনোভাব বিরাজ করছে। সে বিষয়গুলোও কাটিয়ে তোলার জন্য সময়োপযোগী তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। বরং উল্টো বেকার সমস্যা ও মাদক সমস্যা এটাকে আরও জটিল করে তুলছে। আমি মনে করি, আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন ও তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার এক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধেও আমরা খুব বেশি সফল হতে পারিনি। পর্নো ছবির অশুভ প্রভাব নতুন প্রজন্ম বা তারুণ্যের উপর পড়ছে। এটাও আরেকটি কারণ। বিদেশি চ্যানেলের যেসব অনুষ্ঠান বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশের সিনেমা, সিরিয়াল ইত্যাদি পারিবারিক মূল্যবোধের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সেখানেও আমরা কিছু করতে পারছি না। আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি তো রয়েছেই।
তনু হত্যার বিচার শেষ পর্যন্ত কি হলো? অর্থের প্রভাব খাটিয়ে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েও অনেক সময় দেখি অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। আমরা তাদের বিচার করতে পারি না। এটা শুধু আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর ব্যর্থতা নয়। প্রয়োজন আরও বেশি সামাজিক সচেতনতা। সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই মুক্তি মিলবে এবং সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি পাবে।
পরিচিতি: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ / সম্পাদনা: জব্বার হোসেন