এবার মেয়ের লাশ নিয়ে ৬ কিলোমিটার হাঁটলেন বাবা
মাছুম বিল্লাহ: স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে দানা মাঝির ১৬ কিলোমিটার হাঁটার ঘটনার পর এবার অমানবিকতার আরও এক ছবি সামনে এলো ভারতের ওড়িশায়। অ্যাম্বুলেন্সচালক মাঝপথে নামিয়ে দেওয়ায় মৃত মেয়ের দেহ নিয়ে ৬ কিলোমিটার হাঁটলেন এক বাবা। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের ওড়িশার মালকানগিরিতে। হিন্দি দৈনিক জাগরণ ও এনাডু ইন্ডিয়া।
সপ্তাহখানেক আগেই টাকার অভাবে মৃত স্ত্রীর দেহ কাঁধে নিয়ে ১৬ কিলোমিটার পথ হেঁটেছিলেন ওড়িশার দানা মাঝি। এ ঘটনার পর ভারতজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সেই রাজ্যেই ঘটল ঘটনাটি। মালকানগিরির ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়েছে সোস্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওতে দেখা গেছে, বাবার কোলে মেয়ের নিথর দেহ। পাশেই হাঁটছেন মা। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। ছোট্ট মেয়েটির দেহ কোলে নিয়ে কেঁদে চলেছেন বাবাও।
কী হয়েছিল : ওই ব্যক্তির সাত বছরের অসুস্থ মেয়েকে মালকানগিরি জেলা হাসপাতালে রেফার করেন মিঠালি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সেই মতো একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মালকানগিরি জেলা হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট ও এক হাসপাতালকর্মী। কিন্তু, হাসপাতালে পেঁৗঁছানোর আগেই মৃত্যু হয় নাবালিকার। এরপর তা জানতে পেরে অ্যাম্বুলেন্স চালক তাদের মাঝপথেই নামিয়ে দেন বলে অভিযোগ। অগত্যা মৃত মেয়ের দেহ নিয়েই হাঁটতে শুরু করেন তার বাবা মা।
সাদা কাপড়ে ঢাকা দেহটি নিয়ে হাঁটার সময় বিষয়টি নজরে আসে কয়েকজনের। এলাকার বিডিওকে বিষয়টি জানান তারাই। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে সরকারি হাসপাতালেও যোগাযোগ করা হয়।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হতেই নড়চড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উদয়শংকর মিশ্রকে নির্দেশ দিয়েছেন মালকানগিরির জেলাশাসক সুদর্শন চক্রবর্তী। অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মালকানগিরি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জেলাশাসক সুদর্শন চক্রবর্তী জানান, অ্যাম্বুলেন্সচালক অবৈধ এবং অসামাজিক কাজ করেছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় তফশিলি বিষয়কমন্ত্রী জুয়াল ওরাম বলেন, ‘ওড়িশা এবং গোটা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। তফশিলিদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার যে ব্যর্থ, তা আবার প্রমাণিত হলো।’ দানা মাঝির ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশনের বরাদ্দ টাকা ওড়িশা সরকারের ঠিকভাবে খরচ করা উচিত।’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের মতে, দানা মাঝির ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হলে এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যেত। সম্পাদনা: রাশিদ রিয়াজ