প্রিন্ট মিডিয়ার সময় শেষ?
সজল সরকার : গত ৭ আগস্ট আন্তর্জাতিক চ্যানেল এইচবিও’র এক কমেডি শো’র উপস্থাপক জন অলিভার ‘লাস্ট উইক টু নাইট’ অনুষ্ঠানে প্রিন্ট মিডিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে এক রিপোর্ট উপস্থাপনা করেন। অলিভার ১৯৭৬ সালে ‘ওয়াটারগেট’ কেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনমূলক চলচ্চিত্র ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’এ অভিনয়ও করেন। সাংবাদিকতার মূল অর্থ ছিল, কোন ঘটনার ময়নাতদন্ত করে পিছনের অনেক তথ্য ও ঘটনার উপস্থাপনা, কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির ফলে প্রিন্ট মিডিয়ার যুগ অনেকটা প্রাচীন হয়ে গেছে এবং অনলাইন পত্রিকা সে জায়গা দখল করে নিচ্ছে।
এখন আর পাঠকরা পত্রিকার আশায় বসে থাকে না, কোনো ঘটনা জানার জন্য। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রতি মুহূর্তে খবরই পাঠক গোগ্রাসে গিলছে। জন অলিভার এক রিপোর্টে দেখান ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিজিটাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব আদায় করেছে ২ বিলিয়ন ডলার যেখানে এই একই সময়ে প্রিন্ট মিডিয়া লোকসান করেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার।
তবে ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক রিপোর্টে দেখা যায়, ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রিন্ট মিডিয়ার সামগ্রিক আয় ছিল ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১০ সালে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৪ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সম্পাদক মার্টি বেরন বলেন, ‘ডিজিটাল মিডিয়ার প্রভাবে এখন প্রিন্ট মিডিয়াকেও বহুমুখী দায়িত্ব নিতে হচ্ছে, বিশেষ করে প্রত্যেক প্রিন্ট মিডিয়ারই একটি অনলাইন সংস্করণ রাখতে হচ্ছে যাতে পাঠকরা অন্য দিকে ছুটে না যায়। অলিভার তার অনুষ্ঠানে কোটিপতি ব্যবসায়ী স্যাম জেলের কথা বলেন যিনি ২০০৭ সালে লসএঞ্জেলস টাইমস, শিকাগো ট্রিবিউন এবং অর্নাল্ডো সেন্টিনেল-এর মত সব মিডিয়া কিনে নেন। সে সময় সাংবাদিকদের জেল বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকতায় প্রতি আমার আগ্রহ খুবই সহজ, আমি টাকা বানাতে চাই এবং এজন্যই আমি আপনাদের বেতন দিয়ে রেখেছি।’ এখানে জেলের মূল কথা ছিল পাঠক যা চায় সাংবাদিকদের তা-ই করতে হবে।
২০১৩ সালে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজস দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট কিনে নেন এবং এখন পর্যন্ত সেখানকার সাংবাদিকরা সুখেই রয়েছে কারণ পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে জেফ কারো উপর হস্তক্ষেপ করেননি বরং ডিজিটাল পাঠকদের কথা চিন্তা করে আকর্ষণীয় গেম ও ফিচার প্রিন্ট মিডিয়ায় যোগ করেছেন।
তবে এশিয়ায় ডিজিটাল মিডিয়া এখনও প্রিন্ট মিডিয়ার স্থান সেভাবে দখল করতে পারেনি। ভারতে এক সেমিনারে বলা হয় আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়া আরও শক্ত অবস্থানে যাবে। ২০১৫ সালে ভারতে প্রিন্ট মিডিয়া ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। দেশটিতে ১ লাখের বেশি পত্রিকার রেজিস্ট্রেশন আছে এবং প্রতিদিনই দেশটিতে ১০০’র বেশি আবেদন জমা পড়ছে এবং কর্তৃপক্ষ মাসে প্রায় সাড়ে ৩০০ পত্রিকার অনুমোদন দিচ্ছে। ফোর্বস- এর রিপোর্টে বলা হয় আগামী কয়েক বছরে ভারতে প্রিন্ট মিডিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ, কারণ ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বেড়ে যাওয়ায় সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে এবং ইন্টারনেটের সুবিধা সেসব শ্রেণির কাছে এতটা সহজলভ্য না হওয়ায় তারা প্রিন্ট মিডিয়ার উপরই নির্ভর করে থাকে। সম্পাদনা : রিকু আমির