সম্মেলন সামনে রেখে আ.লীগের যৌথসভা ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী কাউন্সিলের আকার বাড়ছে, আছে দুশ্চিন্তাও
দীপক চৌধুরী: আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সার্বিক বিষয় নিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক-সদস্য সচিবদের যৌথসভা ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
আগামী ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংশিষ্ট ব্যক্তিদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেছেন। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন করা হয়। সাধারণত সম্মেলন মানে নতুন কমিটি, নতুন নেতা নির্বাচন।
তবে এবার অধিকাংশ পুরনো নেতৃত্বই থাকবে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদে। কিছু কিছু পদে হেরফের হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, কমিটির আকার বাড়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে কিছু নতুন মুখ আসতে পারে। অনেকে মূল্যবান স্থান থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় আছেন। এছাড়া দলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও গঠনতন্ত্র- ঘোষণাপত্র সংশোধন এবং সংযোজন করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একজন নেতা জানান, যতটুকু জানি, কমিটিতে নতুন চমক থাকবে এবারের সম্মেলনে। কিছু নতুন পদ সৃষ্টি হলে নতুন কিছু মুখ আসবে কমিটিতে। পুরনো নেতারাই বেশির ভাগ থাকবেন। এবার সাধারণ সম্পাদক পদটিও অনেকটা নিশ্চিত হয়ে রয়েছে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জন্যই। তিনি বিভিন্ন সময় সংবাদপত্রে আলোচনা-সমালোচনায় এলেও তার সততা, বিশ্বস্তার প্রতি শেখ হাসিনার বিশেষ আশীর্বাদ রয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলে নানারকম জল্পনা এখন। দলের একাংশ পদোন্নতির আশায় দিন গুনছেন। বিশেষ করে সাবেক ছাত্রনেতারা। তাদের অনেককেই আওয়ামী লীগের উপকমিটির ‘সহ-সম্পাদক’ পদে রাখা হয়েছে। আবার কয়েকজন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন। সরকারের মন্ত্রিসভায় সদস্য হিসেবে রাখা হলেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে না বা দলে পদোন্নতি পাবেন না তারা। এছাড়া ‘সংস্কারবাদী’ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতা সম্পাদকম-লীসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে যাবেন। সম্মেলনে চমক দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। দলের সিনিয়র ও মধ্যম শ্রেণির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
দলের একজন নীতিনির্ধারক জানান, আগামী নির্বাচনে যে ইশতেহার নিয়ে আওয়ামী লীগ জাতির সামনে হাজির হবে তার একটা ‘গাইড লাইন’ এর মধ্যদিয়ে নির্ধারিত হবে। তাই এ সম্মেলনের গুরুত্ব অনেক। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়াই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। আবার ‘গাইডলাইন’ তৈরি করতেও নানারকম হিসাব-নিকাশ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বাড়ছে। ৭৩ সদস্যের কার্যনির্বাহী সংসদ ৯৫ হতে পারে। দলের একাধিক সূত্র জানায়, সেখানেই কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বাড়াতে গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনা হতে পারে। বিশেষ করে বাহাদুর বেপারি, ইসহাক আলী খান পান্না, নজরুল ইসলাম বাবু, লিয়াকত শিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সিদ্দিকী নাজমুলসহ সাবেক ছাত্রনেতাদের জন্য বিশেষ জায়গা বের করার পরিকল্পনা রয়েছে। বয়সে তরুণ নেতাদের ভালো পদ দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা নেতৃত্ব নির্বাচন করে তাই সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার। যারা ইতোমধ্যে দায়িত্ব পালনে যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন তারাই কমিটিতে থাকবেন বলে মনে করি।
দুজন দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, তাদের দলের ৭৩ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির বেশকিছু পদে এবার নতুন নেতৃত্ব আসবে। এ সংখ্যা ৮৫ হতে পারে।
দলের একটি সূত্র জানায়, এবারের কাউন্সিল উপলক্ষে ৬৪টির বেশি জেলায় কাউন্সিল হয়েছে। ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা দলের।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পরপর কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দলটির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়।
বর্তমান গঠনতন্ত্রে আওয়ামী লীগের ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে সভাপতিম-লীর পদের সংখ্যা ১৫টি। সাধারণ সম্পাদকসহ দলের সম্পাদকম-লীর পদ ৩২টি। এর মধ্যে তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদক। দফতর-উপদফতর ও প্রচার-উপপ্রচার চারজন। বাকি ১৭টি বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকের পদ। এর বাইরে ১ জন কোষাধ্যক্ষ ও ২৬টি সদস্যের পদ রয়েছে। সূত্র জানায়, সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই থাকতে পারেন। প্রতিটি বিভাগের জন্য আওয়ামী লীগের একজন করে সাংগঠনিক সম্পাদক আছে। ময়মনসিংহ নতুন বিভাগ হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বৃদ্ধি করতে হবে বলে জানা গেছে।
দলের মূল সেøাগান হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এ সংক্রান্ত কোনো পদ নেই। সম্পাদকম-লীর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক আলাদা একটি পদ খোলা হতে পারে। সম্মেলনে সম্পাদকম-লীতে তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজের নাম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ছেলে রাজশাহীর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনেরও ভালো কোনো পদ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এখন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
কয়েকমাস আগে সম্মেলনসংক্রান্ত এক বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নেতৃত্বে কে আসছেন সেটি জানতে কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নেতৃত্বে কারা আসছেন, কয়জনের কমিটি হবে, সেটি এখন জানার কোনো সুযোগ নেই। সেটি কাউন্সিলেই জানা যাবে, সেখানেই নেতা নির্বাচিত হবে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একঝাঁক তরুণ নেতৃত্ব আসবেন। তার এ ঘোষণার পর সাবেক ছাত্র নেতারাও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।
দলের একজন সিনিয়র নেতা ও উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য বলেন, এবারের সম্মেলনের মূল ‘স্পিরিট’ থাকবে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন। তাই এ সম্মেলনে নেতা বানানোর বিষয়টি একটু ভিন্ন প্রক্রিয়ায় হবে। তিনি বলেন, এখানে সততা, মেধা ও যোগ্যতা বেশি বিবেচনায় নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান কমিটির নেতারাই প্রাধান্য পাবেন বেশি। কারণ তারা অভিজ্ঞতার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন। তবে কিছু নতুন মুখও থাকবে কমিটিতে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লী নিয়ে দলটির ভেতরে আলোচনা চলছে। প্রায় সাত বছর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে থাকা প্রভাবশালী নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে সভাপতিম-লীর সদস্য করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত পরীক্ষিত হিসেবে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাসেত মজুমদারকে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূনকে বর্তমান অবস্থানের বাইরে সভাপতিম-লীর সদস্য করা হতে পারে। বর্তমান দুর্যোগ ব্যস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম. এ মান্নান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এবার কিছু পরিবর্তন ও নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা আছে। কমিটির আকার বাড়ানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দলে আলোচনা চলছে। বর্তমানে সভাপতিম-লীর তিনটি পদ ফাঁকা। এর মধ্যে দুটি ফাঁকা হয়েছে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মারা যাওয়ায় ও লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার করায়। ২০১২ সালের জাতীয় সম্মেলনে একটি পদ পূরণ করা হয়নি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম