
ফুটওভারব্রিজ পরিকল্পিত ও ছাউনিযুক্ত হওয়া প্রয়োজন
পৃথিবীর সকল দেশেই পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে শহরস্থ সড়কসমূহে এবং শহর বহিরস্থ মহাসড়কসমূহে ফুটওভার ব্রিজের প্রচলন রয়েছে। ফুটওভার ব্রিজের মাধ্যমে সড়ক বা মহাসড়কের একপ্রান্ত হতে অপরপ্রান্তে পথচারীরা নিরাপদে ও সাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারে। ফুটওভারব্রিজের নিচ দিয়ে দ্বিতল অবধি বাস ও মালবাহী ট্রাক যেন সহজে ও অবলীলায় চলাচল করতে পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখে এর উচ্চতা ২২-২৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেকোনো সড়ক বা মহাসড়কে স্বল্প দূরত্বে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হলে সেটি অনেকক্ষেত্রে সড়ক ও মহাসড়কের সৌন্দর্যের হানি ঘটায়। ফুটওভারব্রিজসমূহ বেশ উচ্চতাবিশিষ্ট হওয়ায় শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের জন্য তা ব্যবহার অনেকটা কষ্টসাধ্য। বয়স নির্বিভেদে সকলে যেন সহজে ও সাচ্ছন্দে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করতে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে অনেক দেশেই ফুটওভারব্রিজে উঠানামার ক্ষেত্রে চলন্ত সিড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা শহরের একটি ফুটওভারব্রিজে শুধুমাত্র ওঠার ক্ষেত্রে চলন্ত সিড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের জনমানুষের প্রত্যাশা, এ ব্যবস্থাটি সম্প্রসারিত হবে এবং নামার ক্ষেত্রেও ব্যবস্থাটি চালু করা হবে।
যেসব সড়ক বা মহাসড়কে ফুটওভারব্রিজ নেই সেসব সড়ক বা মহাসড়ক পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়ের প্রচলন রয়েছে। জেব্রা ক্রসিংয়ের উপর দিয়ে পথচারীদের চলাচল ট্রাফিক পুলিশ বা সিগন্যালের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পারাপার ফুটওভারব্রিজের মতো অবাধ নয়। ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ব্যয়বহুল হলেও এটি সড়ক বা মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে কোনো ধরনের বিঘœ সৃষ্টি করে না। অপরদিকে জেব্রা ক্রসিংয়ের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত সময় অন্তর পথচারীদের পারাপারের সময় যানবাহনকে থেমে থাকতে হয়। সড়ক বা মহাসড়কসমূহে যানবাহনের এ ধরনের থেমে থাকা পরিহারে অনেক দেশে ফুটওভার ব্রিজের পাশাপাশি পথচারীদের আন্ডারপাসের মাধ্যমে সড়ক পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকা শহরে এ ধরনের তিনটি আন্ডারপাস রয়েছে।
সড়ক ও মহাসড়ক দিয়ে যত্রতত্র পারাপার দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী দ-নীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধে আইন বা বিধিবিধানের লঙ্ঘনের জন্য অপরাধীকে অর্থদ-ে দ-িত করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশের ন্যায় আমাদের দেশের মানুষের একটি অংশ বেপরোয়া। এরা আইন বা বিধিবিধানের কখনও তোয়াক্কা করে না। সড়ক ও মহাসড়ক পারাপারে দেখা যায়, নিজেদের ইচ্ছামাফিক যে স্থান দিয়ে সহজে পারাপার হওয়া যায়, তারা আইন ও বিধিবিধানের অবজ্ঞা ও উপেক্ষায় পারাপারে সে স্থানটিকে বেছে নিচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে চলাচল রোধে সড়কদ্বীপের মাঝখানে যে গ্রিল বা কাঁটাতারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়, তারা তা কৌশলে ভেঙে ফেলে তাদের চলাচল সহজতর করে অথবা বিশেষ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে এগুলো অতিক্রম করে চলাচল করে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশের সড়ক বা মহাসড়কে ফুটওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস নির্মাণের অন্যতম কারণ হলো, জনসাধারণ বা পথচারীদের পারাপার সহজতর ও নিরাপদ করা। পারাপারের ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এগুলো সহজতর ও নিরাপদ হলেও আমাদের দেশে আইন ও বিধিবিধানের প্রয়োগে শিথিলতায় এগুলো দিয়ে চলাচল অনেক সময় দেখা যায় সহজতর ও নিরাপদ নয়। আমাদের সড়ক ও মহাসড়কের অনক ফুটওভারব্রিজ ও আন্ডারপাসে দেখা যায়, ভিক্ষুকরা ভিক্ষাবৃত্তিতে রত, হকাররা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে অবৈধ দখলদারিত্বে বেঁচাকেনায় মত্ত, আর এরই ফাঁকে চলছে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের দৌরাত্ব। এসব কারণে অনেক ফুটওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস দিয়ে চলাচল সহজতর ও নিরাপদ নয়। দেশে শহরের মধ্যে প্রথমদিকে যে সকল ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল, এর সবগুলোরই উপরিভাগ উন্মুক্ত ছিল। বর্তমানে ঢাকা শহরস্থ প্রায় সবগুলো ফুটওভারব্রিজই ছাউনি দ্বারা আচ্ছাদিত। ঢাকা শহরের উভয় সিটি কর্পোরেশনের নগরপিতা সম্প্রতি ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার সাচ্ছন্দ ও নিরাপদ করাসহ এগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনে মনোনিবেশ করেছেন। সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে সবগুলো ফুটওভার ব্রিজই বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তোলা হয়েছে এবং এগুলোর চলাচল পথের দু’ধারে সুশোভিত ফুলের টবের সমারোহ ঘটানো হয়েছে। উভয় নগরপিতা বিতর্কিতভাবে নির্বাচিত হলেও তাদের এ উদ্যোগ নগরবাসীকর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে এবং তাদের এ উদ্যোগের কারণে জরাজীর্ণ ফুটওভার ব্রিজগুলো নান্দনিক রূপ পেয়েছে।
ঢাকা শহরস্থ ফুটওভারব্রিজগুলো ছাউনিযুক্ত হওয়ার কারণে বিশেষভাবে নির্মিত ছাউনিগুলো একদিকে এগুলোর শোভা বর্ধন করছে অপরদিকে এগুলো পথচারীদের রোদের প্রখরতা ও ঝড় বৃষ্টির ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষা করে চলেছে। বিগত কয়েক বছরে ঢাকা শহর বহিরস্থ বিভিন্ন মহাসড়কের বাজার সংলগ্ন এলাকা, বাস স্ট্যান্ড, স্কুল-কলেজের সন্নিকটে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ করার জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে; তবে এগুলো শহরস্থ ফুটওভার ব্রিজের ন্যায় আচ্ছাদিত নয় এবং এগুলোতে নান্দনিকতা ও সৌন্দর্যের অনুপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
ঢাকা শহরে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মিত অনেক ফুটওভার ব্রিজ উড়াল সেতু নির্মাণের কারণে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ায় এগুলো নির্মাণকালীনই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ কারণে শহরস্থ সড়ক ও মহাসড়কে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের আগে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন অপর কোনো স্থাপনা নির্মাণের কারণে এগুলোর উপযোগিতা যেন কোনোভাবে বিনষ্ট না হয়। শহরস্থ সড়ক ও মহাসড়কে যারা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে তারা এ দেশের সাধারণ জনমানুষেরই অংশ। শহরস্থ ফুটওভারব্রিজগুলো ছাউনিযু[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশক্ত হওয়ার কারণে এগুলো যেমন পথচারীদের রোদ ও বৃষ্টি উভয় থেকে রক্ষা করছে কিন্তু মহাসড়কসমূহের উপর নির্মিত ফুটওভার ব্রিজগুলো উন্মুক্ত হওয়ায় এগুলোর উপর দিয়ে চলাচলরত পথচারীরা সে সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ব্যয়বহুল বিধায় এগুলো শহরস্থ সড়ক বা মহাসড়কের যেখানেই নির্মাণ করা হোক না কেন প্রথমত বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন অপর কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কারণে এগুলোর যেন মাঝপথে ভেঙে ফেলার উপক্রম না ঘটে এবং শহরস্থ ওভার ব্রিজগুলো যেভাবে পথচারীদের রোদ বৃষ্টি ও ঝড় ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষা করছে শহর বহির্ভুত ফুটওভার ব্রিজগুলো হতেও পথচারীদের যেন একই সুরক্ষা হয়।
সম্পাদনা: আশিক রহমান
