ড. অনুপম সেন
ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের পর পাকিস্তানের অংশ হই আমরা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা আমাদের নানাভাবে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে। শোষণ-বঞ্চনা, অন্যায় আচরণ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। প্রথমে আমার মায়ের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলো। সেই শুরু। তারপরের ইতিহাস সবারই জানা। নানাভাবে আমাদের ঠকাতে থাকে। আমরা চেয়েছিলাম ন্যায্য অধিকার। কিন্তু তা দিতে কার্পণ্যতাই স্বাধীনতাযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায় আমাদের।
একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তান যেভাবে বাঙালির ওপর অতর্কিতভাবে ঝাপিয়ে পড়ল, নিরহ ঘুমন্ত মানুষের ওপর গুলি চালাল তা ছিল নজিরবিহীন। এক রাতেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত করল ঢাকা। বাংলাদেশজুড়ে চলল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। আমরা যখন পাকিস্তানি সশ্ব¯্র বাহিনীকে মোকাবিলা করছি, প্রাণপন চেষ্টা করছিÑ প্রতিরোধের, তখন এদেশীয় কিছু মানুষ পাকিস্তানিদের সহযোগির ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো। মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগÑ প্রায় সব কাজেই পাকিস্তানিদের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় নিয়োজিত হলো। নিজেরাও হত্যাকযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণ করল। দেশের সঙ্গে তারা বিশ্¦াসঘাতকতা করল। যা ছিল অত্যন্ত নির্মম। একাত্তরে জামায়াত কি করেছিল, তার নেতাদের অবস্থান, কর্মকা-Ñ সবকিছুরই প্রমাণ রয়েছে ইতিহাসে। পাকিস্তানি দোসর রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে জাতি কলঙ্ক থেকে মুক্তির পথে আজ। দায়মুক্তির পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।
একসময় একাত্তরের এই ঘাতকেরা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা গাড়িতে উড়িয়েছিল মন্ত্রী হয়েছিলÑ আমাদের জন্য যা ছিল অত্যন্ত কষ্টের। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ- অনিবার্য ছিল। তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য স্বস্তির ব্যাপার। নিজামী, মুজাহিদ, মীর কাসেম আলীদের মৃত্যুদ- কার্যকরের মধ্যে দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ নির্যাতিত হয়েছিলেন। তাদের জননী, জায়া, কন্যা, স্বজনেরা যে নির্মমতার শিকার হয়েছিলেন, তাদের সেই ঋণ পরিশোধ করার কোনো পথও তো নেই আমাদের। অত্যন্ত অমানবিক আচরণ করা হয়েছিল তাদের সঙ্গে। ক্ষতিগ্রস্ত, নির্মমতার শিকার জননী জায়াদের ক্ষত পুরো লাঘব করা না গেলেও কিছুটা স্বস্তি মিলেছে নিশ্চয়ই।
মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, ইতিহাস আজ অনেকেই খুব সঠিকভাবে জানে না। সঠিক ইতিহাস আসলে মানুষকে জানতে দেওয়া হয়নি। ভুল ইতিহাস মানুষকে পড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
পরিচিতি : সভাপতিম-লীর সদস্য, আওয়ামী লীগ
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মতামতটি লিখেছেন আশিক রহমান