চীনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বলয়
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে এক চুক্তির আওতায় পরস্পরের নৌঘাটি ও বিমানঘাটি করার ব্যাপারে একমত হয়েছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ভবিষ্যতে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক অভিযানের সময় যেন ভারতের সামরিক স্থাপনা ব্যবহার করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, ভারত ও ফিলিপাইনকে সমরাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে, যাতে ভবিষ্যতে চীনের পক্ষে এতগুলো দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করা যেন সম্ভব না হয়। ইতোমধ্যে ভারত অরুনাচল প্রদেশে চীন সীমান্তকে লক্ষ্য করে দূরপাল্লার সুপারসনিক ব্রম্মস মিসাইল মোতায়েন করেছে। চীন প্রতিবাদ করলেও ভারত কোনো কর্ণপাত করছে না।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র আগামী তিন বছরের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে একাধিক গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট, গাইডেড মিসাইল ডেসট্রয়ার, গাইডেড মিসাইল ক্রুজার, পারমানবিক অস্ত্রসজ্জিত সাবমেরিন, ৬টি বিমানবাহী রনতরি মোতায়েন করবে। প্রতিটি বিমানবাহী রনতরি ৭০টি করে জঙ্গি বিমান, ১০টি করে জঙ্গি হেলিকপ্টার বহন করে। আগামী দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সকল নৌপথে তার একক কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সম্পর্ক করতে চাচ্ছে। চলতি বছর বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চীনের তৈরি দুটি সাবমেরিন যুক্ত হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতে এত যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েনের উদ্দেশ্য কি? সামরিক বিশেষজ্ঞদের কাছে এটি একটা প্রশ্ন। কারণ দক্ষিণ চীন সাগরকে বলা হচ্ছে আগামীতে একটি বড় ধরনের নৌযুদ্ধের স্থান। বছরে এই দক্ষিণ চীন সাগরের এলাকা দিয়ে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য পরিবহন হয়। যার একটা বড় অংশ চীন রপ্তানি করে থাকে। এখানে রয়েছে ১১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল ও ১৯০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস। এছাড়া রয়েছে বিশাল মৎস সম্পদ। এককভাবে চীন প্রাকৃতিক সম্পদ ও মৎস সম্পদ আহরণ করবে যুক্তরাষ্ট্র তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। কারণ সব জায়গায় হস্তক্ষেপ করার বদ অভ্যাস যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের। তারা মনে করে সারা পৃথিবীতে শুধু তারাই মাতব্বরি করে বেড়াবে। কিন্তু চীন, উত্তর কোরিয়া, ইরানের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের এই মাতব্বরিটা মেনে নিতে পারেন না বলেই যুক্তরাষ্ট্র সেসব দেশে গণতন্ত্র নেই বলে চিৎকার করছে।
মজার ব্যাপার এই, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো মুসলিম দেশে গণতন্ত্র নেই। এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি নেই। কারণ দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত। যতক্ষণ একটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকে, ততক্ষণ সেই দেশগুলোতে কোন তন্ত্র আছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বক্তব্য নেই। মূল কথায় আবারও ফিরে আসি। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র মাঝে মাঝে রাডার সজ্জিত গোয়েন্দা বিমান এওয়াক্স, পারমানবিক বোমারু বিমান বি-৫২ পাঠিয়ে থাকে। এছাড়া একটি বিমানবাহী রনতরি ও দুটি ফ্রিগেট দক্ষিণ চীন সাগরে টহলে রয়েছে। একাধিক দ্বীপ নিয়ে চীন প্রতিবেশি কিছু দেশগুলোর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, জাপান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। তিনটি দেশকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। যেন, চীন সবসময় চাপের মধ্যে থাকে। আস্তে আস্তে যুক্তরাষ্ট্র চীনবিরোধী দেশগুলোকে নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সামরিক বলয় করতে যাচ্ছে।
এখন দেখার বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে চীন কতটা প্রস্তুতি নিতে পারে। চীনের রয়েছে, একটি বিমানবাহী রনতরিসহ ৫৫টি সাবমেরিন। এর মধ্যে কিছু সাবমেরিন পারমানবিক বোমা সজ্জিত মিসাইল বহন করে। যেকোনো প্রতিপক্ষ দেশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চীনের সাবমেরিন শত্রু পক্ষের বিমানবাহী রনতরিসহ সবধরনের যুদ্ধ জাহাজকে ধ্বংস করতে সক্ষম। এছাড়া চীনকে রাশিয়া সমরাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। দুর্বল চীন এখন সবল চীনে পরিণত হয়েছে। তাকে পরাস্ত করা ভবিষ্যতে যেকোনো দেশের পক্ষে কঠিন।
সম্পাদনা: আশিক রহমান