আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান আমাদের ত্রুটিবিচ্যুতি থাকতে পারে, কিন্তু জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে সরে যাইনি
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
প্রত্যেক জিনিসেরই একটি ঐতিহ্য থাকে। ঐতিহ্য খুব মূল্যবান। বিএনপিরও একটা ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্য হচ্ছেÑ জিয়াউর রহমানের মতো ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম করে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। নিজেও সশ্র¯্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশের এক দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাধে তুলে নিতে হয়েছিল, দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল তাকেÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান (অব.)
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের হাতেই সৃষ্টি বিএনপি। আমরা যদি বিএনপির গঠনতন্ত্র দেখি, তার ১৯ দফা দেখি তাহলে দেখব, দলটি একটি আদর্শভিত্তিক দল। যেখানে দেশের সার্বভৌমত্বের কথা বলা আছে, আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা রয়েছে, দেশ ও জনগণের স্বার্থরক্ষার কথা বলা আছে। বিএনপি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, প্রাতিষ্ঠানিকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ইতোমধ্যেই ৩৯ বছরে পা রেখেছে। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিএনপি আজ এখানে। এই চলার পথে নানা সমস্যা, সংকট, প্রতিকূল সময় মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রতিকূলতাকে জয় করে সামনে এগোতে হয়েছে। এই পথ চলার পথে আমাদের ক্রটিবিচ্যুতি থাকতে পারে, কিন্তু জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে সরে যাইনি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমরা লিপ্ত ছিলাম, এখনো আছি। দেশ ও দশের স্বার্থসুরক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই অব্যাহত চেষ্টায় অনেক বাঁধাবিপত্তি আসবে জানি, তবুও সব বাঁধাকে জয় আমরা করবই, জনগণ সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ গঠন করার একটি রূপকল্প ইতোমধ্যে খালেদা জিয়া দিয়েছেন। ঐক্যমতের বাংলাদেশ গঠনের আহ্বানও জানিয়েছেন। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে গণতন্ত্র, সুশাসন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতিশীল থাকবে। দল ও মত ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু দেশের সার্বভৌত্বের প্রশ্নে একটি জায়গায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী যেকোনো কিছু হওয়ার চেষ্টা হলে বা কেউ আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করতে চাইলে তা প্রতিরোধ করব একসঙ্গে। অমীমাংসিত যেসব বিষয় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে সমাজে, সেসব নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে। বিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতি বিএনপি চায় না। চায় জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাক। জনগণ গণতন্ত্রের সুফলভোগী হলে দেশ এগিয়ে যাবে। পৃথিবীর বুকে আমরা মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি আদর্শভিত্তিক গণতন্ত্র চর্চার একটি রাজনৈতিক দল। ধারাবাহিকভাবেই আমরা গণতন্ত্র চর্চা করে আসছি। গণতন্ত্র যাতে কোনোভাবেই ভুলুন্ঠিত না হয়, সে দিকে সজাগ-সতর্ক রয়েছে বিএনপি। সাংগঠনিকভাবে বিএনপি এখন কিছুটা দুর্বল। কিন্তু তার মানে এই নয়, আমরা হতাশ। আমাদের লাখো কোটি কর্মী-সমর্থক রয়েছে। তারাই বিএনপির প্রাণ। সামনের দিনে এসব নিবেদিত কর্মী-সমর্থকেরাই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সাময়িক এই সংকটও তখন আর থাকবে না।
বিএনপির সংকটটি কী ধরনের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের সাময়িক এই সংকটের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এখনো জেলাভিত্তিক কমিটিগুলো হয়নি, কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়েও অনেকের নানারকম অভিযোগ রয়েছে। এত বড় একটি রাজনৈতিক সংগঠন, এরকম ছোটখাটো কিছু সমস্যা তো থাকতেই পারে। এ সমস্যা সাময়িক। নেতাকর্মীরা মিলে দলের আদর্শ রক্ষা করবে। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের লড়াইসংগ্রাম চলবে। যে সংগ্রাম আমরা অতীতেও করেছি। গণতান্ত্রিক এই লড়াইয়ে জয়ী আমরা হবোই।
তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষ। মানুষেরই ভুল হয়। মানুষ মাত্রই ভুল আছে। যেকোনো সংগঠনেরও ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোরও ভুল থাকতে পারে। এমন কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন নেই যার কোনো ভুল নেই। সেটা আমেরিকা, ভারত কিংবা বাংলাদেশÑ সবারই কমবেশি ভুলভ্রান্তি আছে। ভুল সরিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি করি, আমাদের সামনের দিকে তাকানো উচিত। আশাহত হতে নেই, এগিয়ে যেতে হলে আশাবাদী হতে হয় বলেও মনে করেন এই রাজনীতিবিদ।