আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাফল্য
মিল্টন বিশ্বাস
এদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া প্রত্যাশিত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
৫. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ‘গণহত্যায় দায়ীরা এখন কাঠগড়ায়’ শীর্ষক এক নিবন্ধে (সমকাল, ৯ মার্চ, ২০১৬) যুদ্ধাপরাধের বিচারে জনসমর্থনের কথা উল্লেখ করেছেন। এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৯ শতাংশ মানুষ চান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকুক। তার মতে, ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া জনগণ ন্যায়বিচারের এই সংগ্রামে আস্থা রেখেছেন। মূলত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ স্বচ্ছ ও ন্যায়ভিত্তিক। এটি গঠন করা হয়েছে বৈশ্বিক আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত রোম স্টাটিউটের কাঠামো অনুসারে। ফলে এই বিচার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ। যে কেউ গিয়ে বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। উপরন্তু বিশ্বে বাংলাদেশের এই ট্রাইব্যুনালই একমাত্র যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল, যেখানে বিবাদীরা বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করতে পারে।
‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ নিজেদের মর্যাদার ব্যাপারেও সতর্ক। ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে জরিমানা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। সাজা হিসেবে রায় ঘোষণার দিন তাকে ট্রাইব্যুনালে পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেই সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অবশ্য ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালত অবমাননার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বার্গম্যানের বিষয়ে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ১৪ জন তাদের বিবৃতির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চান। অন্যদিকে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপীলের রায়ের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের করা মন্তব্য আদালত অবমাননাকর উল্লেখ করে তাদের তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ৫ মার্চ ২০১৬ রাজধানীর বিলিয়া মিলনায়তনে ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ আয়োজিত গোলটেবিলে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মীর কাসেম আলীর আপিলের পুনরায় শুনানি চেয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল। আর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে পদ ছাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’কে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে রাতদিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সেখানে তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করি না। বরং তাদের সাফল্যে আজ আমরা গৌরবান্বিত। (শেষ)
লেখক: অধ্যাপক এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: জব্বার হোসেন