সমাধান নাকি বৈরিতা কোন পথে কাশ্মীর ?
নূসরাত জাহান: ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের এবারের সংকট যেন সমাধানের নয়। প্রায় দুমাস ধরে সেখানে রক্তপাত চলছে। সরকার কিংবা স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর যে অবস্থান তাতে সমস্যা সমাধানের কোনো আভাস মিলছে না। সম্প্রতি হুরিয়াত নেতাদের আলোচনার টেবিলে আনার সরকারি উদ্যোগও ভেস্তে গেছে। পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে খাদের কিনারায় এসে উপস্থিত কাশ্মীর।
বিশেষজ্ঞরা প্রথম থেকেই সরকার-হুরিয়াত নেতাদের বৈঠক নিয়ে বিশেষ আশাবাদী ছিলেন না। তাদের মতে, এবার হুরিয়াত নেতাদের উস্কানিতে কাশ্মীর সমস্যা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখান থেকে ফেরাটা একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দাদের তথ্য, চলতি অশান্তির পেছনে পাকিস্তানের উস্কানি রয়েছে। একইসঙ্গে তারা টাকাও ঢালছে। অভিযোগ রয়েছে, হুরিয়াত নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানির বড় ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাচ্ছে। তাইতে দুই কূল রাখতে হুরিয়াত নেতারা ইচ্ছা করেই বৈঠক থেকে দূরে আছেন।
প্রশ্ন হল, কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ কী চাইছেন? সংকটের কারণে সেখানকার মানুষের রুটি-রুজি প্রায় বন্ধ। পর্যটনের মৌসুমে যায়নি কোনো পর্যটক। ফলে আর্থিক সংকট আরও বাড়ছে। তবে কাশ্মীরের জনগণ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য দীর্ঘ সময় কষ্ট করতেও রাজি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীরের বর্তমান সংকটের পেছনে বিজেপি একটি বড় কারণ। বিজেপিকে রুখতে ভোট চেয়ে জিতে আসা পিডিপি ভোটের পরেই নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে হাত মেলানোয় উপত্যকার বড় অংশের কাছে মেহবুবার দল বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সর্বদলীয় বৈঠকেও কাশ্মীর সংকটের জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা। তৃণমূলের বিধায়ক সৌগত রায় বলেছেন, ‘যে তরুণেরা পাথর ছুঁড়ছেন তাদের কে বোঝাবে? সেই প্রশ্নটি অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে।’ মেহবুবার দাবি, পাথর ছোড়ার জন্য তরুণদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। এসব তরুণদের চালাচ্ছে হুরিয়াত তারা।
কেন্দ্রীয় সরকার ও হুরিয়াত সব পক্ষই বুঝছে সমস্যার গভীরতা। হুরিয়াতকে ছাড়া কাশ্মীর সমস্যার সমাধানও সম্ভব নয় এটাও জানে সরকার। এজন্য রাজনাথ সিং বা অরুণ জেটলিরা না গিয়ে বিরোধী এমপিদের পাঠানো হবে তাদের কাছে। সেই মতো কারাবন্দি হুরিয়াত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকের সঙ্গে কথা বলে এমপি আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। মিরওয়াইজ তাকে ফিরিয়ে দেন। এরপর বন্দি জেকেএলএফ নেতা ইয়াসিন মালিকের সঙ্গে দেখা করতে যান ডি রাজা-ইয়েচুরিরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
মালিক বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে তারা দেখা করতে এসেছেন। কিন্তু প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ইয়াসিন মালিক। তার মতে, কাশ্মীরের এ অবস্থায় আলোচনা অর্থহীন।
গিলানির বাড়িতেই সবচেয়ে অস্বস্তিতে পড়েন সীতারাম-শারদ যাদবরা। তারা ঠিক করেছিলেন তারা নিজেরাই যাবেন গিলানির সঙ্গে কথা বলতে। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু গিলানি বাড়ির সামনে থেকেই ফিরে আসতে হলো। কারণ গিলানি তার বাড়ির দরজা খোলেনি। উল্টো ভারতবিরোধী স্লোগান দেন তার সমর্থকরা। হতাশ সীতারাম না বলে আর পারলেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা এসেছিলাম গিলানির কথা শুনতে। উনি দরজা খোলেননি। আলোচনাই কিন্তু সমাধানের একমাত্র পথ।’
প্রায় দুই মাস পর সরকার আলোচনায় বসার তাগাদা অনুভব করছে। কিন্তু সমস্যা এতদিনে অনেক গভীরে শিকড় বিস্তার করেছে। উপত্যকার মানুষের মতো সবারই জিজ্ঞাসা কোন পথে আগাচ্ছে কাশ্মীর সংকট।
সূত্র: হিন্দু