জিয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন প্রধানমন্ত্রী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক বাতিল করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হবে। পদক ও সম্মাননা পত্রটি ফেরত দেওয়ার জন্য বলা হবে। জাতীয় পুরস্কার প্রদানসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি জিয়াউর রহমানের পদক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত নিলেও তারা পুরস্কার ফেরত নেওয়া ও পদকটি কি করা হবে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা পদক প্রদান শুরু করেন। এরপর ৩৮ বছরে আজ পর্যন্ত কারও পদক বাতিল করার নজির নেই।
এ পদকটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে কবে নাগাদ জানতে চাইলে সেখানকার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপারিশ করেছে। এখন এটা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনুমোদন হলে তা কার্যকর করা যাবে। আবার কেবল প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠালে তিনি অনুমোদন করে দিলেও আমরা সে হিসেবে কার্যকর করতে পারব। কোন পর্যায়ে পাঠানো হবে এ ব্যাপারে কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদে পাঠাতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। প্রধানমন্ত্রী দিলেই হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবটি সরাসরি যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই বলা যাচ্ছে না। এটা অনেক উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত, তাই একটু চিন্তাভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে বলতে পারি এটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এখনো পাঠানো হয়নি।
জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক ও সম্মাননা পত্রটি জাতীয় জাদুঘরের স্টোর রুমে আছে। কিন্তু ২০০৩ সালে তাদেরকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া হলেও পুরস্কারের টাকার ব্যাপারে সুস্পষ্ট করে কিছু পাওয়া যায়নি। তাদের পুরস্কারের টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকার কথা আমি বলতে পারছি না। কারণ ওই সময়ে আমি এ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করিনি। তাছাড়াও বিষয়টি অনেক নথিপত্রের ব্যাপার আছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে।
ওই সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন ড. সাদত হোসেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকার বিষয়টি আমার ঠিক মনে নেই।
পুরস্কারের পদকে তো স্বর্ণ আছে। ওই স্বর্ণের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হবে জানতে চাইলে সূত্র জানায়, পদক প্রত্যাহার করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে বিষয়টি সেখানে বলে দেওয়া হবে। যদি তা বাতিল করে সংরক্ষণ করার জন্য বলা হয় তাহলে মন্ত্রিপরিষদের কাছে বাতিল হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। আর যদি তা ভেঙে ফেলে স্বর্ণ কি করতে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় তাহলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। দেখতে হবে ফাইনালি কি বলা হয়। আসলে এ বিষয়টি একেবারেই প্রধানমন্ত্রীর ও পুরস্কার প্রদান কমিটির ব্যাপার। এ ব্যাপারে আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না।
পুরস্কারের টাকা কি করা হবে জানতে চাইলে পুরস্কার প্রদানসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য একজন মন্ত্রী ও অপর একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেন, পুরস্কারের টাকার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত নেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। এ ব্যাপারে সব কিছুই করা হবে। এ জন্য আর একটু সময় লাগবে। মন্ত্রী বলেন, এর আগে কখনো এ রকম পদক বাতিল করা হয়নি। আমরাই একটা নজির তৈরি করব।
ওই সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যিনি এ পদক প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি বলেন, অন্যান্যবার স্বাধীনতা পদক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেওয়া হলেও ওই বারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০০৩ সালের স্বাধীনতা পদক বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানকে দেওয়া হবে। তাদের পুরস্কার দুটি তাদের পরিবারের কারও কাছে হস্তান্তর করা হবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের অবদানের জন্য তাদের দুজনকে দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে। সে পুরস্কার রাখা হবে জাতীয় জাদুঘরে। এ জন্য ওই সময়ে আমরা পুরস্কার জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর ও তা প্রদর্শনীর জন্য দেই। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজ হাতে ওই পুরস্কার দুটি জাদুঘরের ২৩ নম্বর গ্যালারির প্রদর্শনী বক্সে রাখেন।
তিনি জানান, ওই সময়ে পদক দুটি তৈরি করা হয়েছিল পুরনো ঢাকার একজন স্বর্ণকারকে দিয়ে। তার নামটা এখন ঠিক মনে নেই। আর স্বর্ণের পরিমাণ কত ছিল সেটা মনে নেই। পুরস্কারের টাকার পরিমাণ ছিল এক একটির জন্য এক লাখ টাকা। ওই পুরস্কারের টাকা কি করা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার মনে নেই। মন্ত্রিপরিষদের হিসাব বিভাগে এ ব্যাপারে হিসাব থাকবে। যদিও সাধারণভাবে নিয়ম হচ্ছে টাকা পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি পাবেন। তিনি না থাকলে তার উত্তারাধিকারীরা পাবেন।
এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে নথিপত্র ও অন্যান্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। টাকা কোথাও থেকে থাকলে ওই টাকাও পুরস্কারের ওই খাত থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তবে এখনো টাকার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি না। আগে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত কী হয় এর প্রেক্ষিতে সব কিছুই করা হবে।