পশুর বর্জ্য রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা কতটুকু কাজে লাগাচ্ছি আমরা?
রবিউল আলম
রপ্তানিযোগ্য পশুর বর্জ্য রপ্তানি সম্পর্কে সরকার ও দেশবাসীকে সচেতন করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বারবার আবেদন করেছি। আলোচনার জন্য কোনো সাড়া পাইনি। ‘জীবন বাঁচাতে, জীবন সাজাতে, পশুর বর্জ্য অপরিহার্য’ সেøাগান লিফলেট তৈরি করে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৮ বছর যাবৎ বিলি করছি। পশুর বর্জ্য হলোÑ হাড়, শিং, চামড়া, নাড়িভুড়ি, পেনিস, মূত্রথলি, চর্বি, রক্ত ইত্যাদি, যা সবই রপ্তানিযোগ্য। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে আমরা যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছি, যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি, তাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব পশুর বর্জ্য রক্ষা করে বিদেশে রপ্তানি করছি। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মিডিয়া প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতা কাজ করলে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা করা যেত। সামনে কোরবানির ঈদ, চামড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিযোগ্য পণ্য। চামড়া ব্যবসায়ী, মাদরাসা, মসজিদ, লিল্লাহ বোডিং, গরুর ব্যাপারি, কৃষক, ব্যাংক, এনজিও সমিতি, পাচারকারী, জাল টাকার কারবারি, পকেটমার, পশুর বর্জ্য ব্যবসায়ী, মাংস শ্রমিক, মাংস ব্যবসায়ী ছুরি চাকুওয়ালা সবার কাছে কোরবানি অত্যন্ত লোভনীয়। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা পশু কোরবানি দেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। গরিব-দুঃখীরাও ঈদটি পালন করেন নিজেদের মতো করে।
সরকার, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, পরিচ্ছন্নকর্মীরা দায়িত্ব পালনে তৎপর থাকেন কোরবানির ঈদ কতটা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করা যায় তা নিয়ে। কিন্তু ট্যানারির মালিক, পোস্তার আড়ৎদার, চামড়া মজুতদার কোরবানি আসার আগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার দাম কমিয়ে দেন। সিন্ডিকেট মাঝে মাঝে সফল হয়, আবার ব্যর্থও হয়। অতিলোভের কারণে দাম বেশি কমে গেলে, চামড়া ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ার প্রচারণা চালায়। ট্যানারি মালিকরাই চামড়া পাচার হচ্ছে প্রচারণাটি চালায়। এমন পরিস্থিতির কারণে চামড়ার দাম বাড়াতে হয়। এর ফলে দেশ হারায় বৈদেশিক মুদ্রা। আগের দিন আর নেই, এখন মুক্ত বাজার অর্থনীতি, কম্পিউটার ক্লিক করলেই দাম জানা যায়। চামড়া ব্যবসার নামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিবেন, শিল্পকারখানা করে এদেশের জনগণ ও সরকারকে জিম্মি করে ব্যবসা করবেন, তা হবে না।
এখানে উল্লেখ্য, ট্যানারির মালিকদের ওপর আমরা চামড়ার দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়ে থাকি। দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, তা তদারক করতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বÑ কোরবানির ঈদের পশুর চামড়া ঠিকমতো ছাড়ানো হয় কিনা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা তা নজর রাখা। যারা নিয়মিত গরু জবাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, কাজ করে, সে সব শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারলে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা করা যেত, পাশাপাশি চামড়ার মানও উন্নত হতো। রাষ্ট্রের দায়িত্ব বিপুল এ বৈদেশিক মুদ্রার সম্ভাবনাকে রক্ষা করা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে চামড়া শিল্পের মালিকদের মাধ্যমে লোকজনকে নিয়ে প্রশিক্ষণের নামে সভা-সেমিনার করে সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে। এটা জনপ্রত্যাশা নয়।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি/ সম্পাদনা: আশিক রহমান