প্রসঙ্গ পুরনো কারাগার : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই বাস্তবায়িত হোক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ এপ্রিল (২০১৬) ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে নবনির্মিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার’ উদ্বোধন করেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় সোয়া ২শ’ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড থেকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত হয়েছে কেন্দ্রীয় কারাগারটি। একইসঙ্গে বদলে গেছে কারা স্থাপনার লাল রং বা লাল দালানের কথাটিও। এ কারণে বর্তমানের আধুনিক এ কারাগারটির দেয়ালের রং সাদা করা হয়েছে। বিশ্বের আধুনিক সকল কারাগারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে নতুন কারাগারটি উদ্বোধন হওয়ার আগেই শেখ হাসিনা পুরনো কারাগারের জায়গায় কি কি স্থাপনা হবে সেই নির্দেশনা প্রদান করেন। এজন্য কারাগারের জায়গাকে কেন্দ্র করে আগস্ট মাসে শুরু হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘হল আন্দোলন’ এবং ওই মাসের শেষদিকে এসে পুরান ঢাকাবাসীর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে মাঠে নামার পরিপ্রেক্ষিতে ১ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক প্রেস-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি অযৌক্তিক বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। কারণ পুরনো কারাগার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেখানে গড়ে তোলা হবে বিনোদন কেন্দ্র, জাদুঘর ও কারা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। জরাজীর্ণ পুরনো কিছু ভবন ভেঙে সেখানে নতুন স্থাপনা তৈরি করা হবে। কিছু বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
২.কারাগার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনার পুরোটা জ্ঞাত হওয়ার পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জানিয়েছেন, একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের পুরনো কারাগারের জায়গার দাবির কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই, তেমনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পুরানো ঢাকাবাসীর সম্পর্কের অবনতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। শূন্য আবাসন ব্যবস্থা সম্বলিত দেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতি বছরের মতো এবারও দীর্ঘদিন যাবত ‘হলে’র জন্য আন্দোলন করে আসছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কাছাকাছি কোনো খালি জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গাটি বরাদ্দ করার জন্য ছাত্ররা দাবি জানায়। এ জায়গায় কি করা হবে তা বিস্তারিতভাবে জানা না থাকায় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের ভিত্তিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে জানানো হয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতার স্মৃতি রক্ষার্থে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যে সকল স্থাপনা তৈরি করা হবে এবং পরবর্তীতে এখানে যে সকল অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হবে তা করার সক্ষমতা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশি রয়েছে। তাই ঢাকা কেন্দ্র্রীয় কারাগারের জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ করার জন্য সরকারকে আগস্ট মাসে একাডেমিক কাউন্সিল আবেদন জানায়।
পরবর্তীতে পুরানো ঢাকাবাসী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এর বিরোধিতা করছে। পুরানো ঢাকা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি অবস্থান একেবারেই কাম্য নয়। ঐতিহ্যগতভাবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তথা সাবেক জগন্নাথ কলেজের সঙ্গে পুরানো ঢাকাবাসীর সম্পর্ক নিবিড় ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এখানে উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যদিও পুরানো ঢাকার কেন্দ্র্রীয় কারাগারের জায়গাটি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দাবি একখ- জমি পাওয়া।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বহুবার বলেছেন, বেদখল হওয়া হল (পুরানো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হিন্দুদের ছোট ছোট পরিত্যক্ত বাড়ি) যা জগন্নাথ কলেজ থেকে ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ২০ বছর আগে ১৯৮৫ সালেই হাতছাড়া হয়ে যায়। ওইসব স্থাপনা পুনঃদখল করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের কাজ বা দায়িত্ব হতে পারে না। এগুলো পুনঃউদ্ধার করে মালিকানা স্বত্ত্বসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্ব। জায়গার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন বিশেষ করে আবাসন চরম সংকটের মধ্যে আছে। এই সংকট উত্তরণের নিমিত্তে সরকারের সুবিধাজনক স্থানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি জায়গার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান হয়েছে। (চলবে)
সম্পাদনা: জব্বার হোসেন