হত্যা, অস্ত্র চোরাচালান ও জঙ্গিবাদ সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা ভাবাচ্ছে পুলিশকে
আমিনুর রহমান তাজ: হত্যা, অস্ত্র চোরাচালান ও জঙ্গিবাদে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত ব্যক্তি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম বলে নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর। প্রথমে তাকে মেজর মুরাদ বলে শনাক্ত করেছিল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।
পরিদফতরের একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানান, নিহত জাহিদুল ইসলাম গত বছর সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। নিহত মেজর জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৪৩ লং কোর্সে প্রশিক্ষণ শেষে ২০০০ সালে কমিশন লাভ করেন। আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদফতরের পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, পারিবারিক কারণ দেখিয়ে মেজর জাহিদুল ইসলাম স্বেচ্ছাঅবসরে গিয়েছিলেন বলে নথিতে প্রমাণ মিলেছে।
এর আগে সেনাবাহিনী থেকে আরেক চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হককে জঙ্গি কার্যক্রমের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশ।
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় সাবেক সেনা কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। এদের মধ্যে ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিএফইউএল জেটিতে ধরা পড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তিনজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। এরা হলেনÑ জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম, মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন। স্মরণকালের বৃহত্তম ওই অস্ত্র চোরাচালান মামলায় সামরিক কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি বিভিন্ন মহলে আলোড়ন তোলে।
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধে সেনা কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘জঙ্গিবাদে সেনা কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়টি টেস্ট কেস হিসেবে খতিয়ে দেখা উচিত। সে কেন সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করল, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার’।
জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণাকারী কর্মকর্তা নূর খান লিটনের মতে, ‘বাংলাদেশে ব্লগারসহ যেসব জঙ্গিহামলা হয়েছে বা হচ্ছে সে সব হামলার সঙ্গে প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা অনুমান করা যায়’। লিটন আরও বলেছেন, ‘বেসরকারি ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ যদি জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হয়, তার চেয়ে ভয়াবহ রূপ নেয় যখন বিশেষ কোনো বাহিনীর দু-একজন যুক্ত হয়। ভয়ের ব্যাপারটা এখানেই যে, সে একদিকে প্রশিক্ষিত ও অস্ত্র সংগ্রহের সামর্থ রাখে।’
তবে হত্যা, অস্ত্র চোরাচালান এবং জঙ্গিবাদে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই বাহিনীর বাইরে থেকে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘সামরিক কোনো কর্মকর্তা জঙ্গিবাদে যুক্ত হলে সেটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করে, যা উদ্বেগজনক’। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের যুক্ত হওয়াটাই ‘আইকনিক’ উপস্থিতি। এ উপস্থিতির কারণেই তাকে ‘আইকনিক ফিগার’ হিসেবেই দেখা হয়।’ সম্পাদনা: মোরশেদ