জাদুঘরে প্রদর্শনের পরিকল্পনা নেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা পদক কী করা হবে মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত নেই
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা পদকটি জাদুঘরের স্টোর রুমেই থাকবে, না কি করা হবেÑ এ ব্যাপারে মন্ত্রিসভা কমিটির এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এ কারণে জাদুঘরে স্টোর রুমে পদকটি দশ বছর পরে থাকার পরও এখন আর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এ পদকটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তারা বুঝতে পারছেন না পুরস্কারটি স্টোর রুমেই রাখবেন নাকি প্রদর্শন করবেন। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই পদকটি এখন আমরা স্টোরে রেখেছি। সেটা রেখেও বিপাকে আছি। আবার প্রদর্শনও করতে পারছি না। কারণ পদকটি বঙ্গবন্ধুর কেউ গ্রহণ করেনি। এখন আমরা কিছু করলে তাতে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা পদক ও সম্মাননাপত্রটি আওয়ামী লীগ ও বন্ধবন্ধুর পরিবার গ্রহণ করেনি। প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা হলেও ২০০৩ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার ওই পদকটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পুরস্কারটি জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে হিসেবে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাদুঘরের মহাপরিচালকের কাছে হস্তান্তর করেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর পরিবার ওই পদক প্রত্যাখ্যান করলে ওই পুরস্কার এখনো পর্যন্ত বহাল রয়েছে। ওই সময়ে এটি জাদুঘরে দেওয়া হয়। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পদকসংক্রান্ত কমিটি বঙ্গবন্ধুর পুরস্কারটি জাতীয় জাদুঘরের স্টোর রুমে আছে সেটাই জানে না।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা পদকটির ব্যাপারে কিছু জানেন কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী ও জাতীয় পুরস্কার প্রদানসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর পদক ও সম্মাননা কোথায় আছে এটা আমার জানা নেই।
আমরা খবর নিয়ে জেনেছি ওই সময়ে পদকটি বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যাখ্যান করার পর তা জাদুঘরে দেওয়া হয়েছিল, এটা প্রদর্শনীও হয়েছে। এখন কি সেটা সেখানেই থাকবে, না কি করবেন? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি ঠিক জানি না, এটা জাদুঘরে আছে কিনা। তিনি বলেন, ওই সময়ে আমরা পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলাম।
বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানকে এক সঙ্গে পদক দিয়ে তাকে খাটো করা হয়েছিলÑ এ অভিযোগ তুলে আপনারা নেননি, জিয়ার পদকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলো, বঙ্গবন্ধুর পদকটি কি করবেন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এখনো এ ব্যাপারে বলতে পারব না। কারণ বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, তার তো স্বাধীনতার পদকের প্রয়োজন হয় না। তিনি হলেন জাতির পিতা, সবার উপরে। তাকে কোনো পুরস্কার দিয়ে মাপা যাবে না।
জিয়ার পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পর বঙ্গবন্ধুর পদকটি জাদুঘরেই থাকবে, নাকি আপনারা ফিরিয়ে নিবেন কিংবা প্রদশর্নীর জন্য সিদ্ধান্ত নিবেনÑ এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। যে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল তা প্রদশর্নীর কোনো পরিকল্পনা এখনো নেই।
মন্ত্রিপরিষদ সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর পদক ও সম্মাননা আমাদের এখানের নথিপত্রে জাতীয় জাদুঘরেই রয়েছে বলে জানি। এখন এ পদক কি করা হবে তা আমরা জানি না। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রী সংক্রান্ত কমিটি সিদ্ধান্ত নিলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায়ই থাকবে।
বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক জাতীয় জাদুঘরে দেওয়ার প্রসঙ্গে ওই সময়ের দায়িত্বপালনকারী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, ওই দুটি পদক কারও উত্তরাধিকারীকে দেওয়া হয়নি কারণ পুরস্কার দুটির ব্যাপারে তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই পুরস্কার তাদের কাউকে নয় জাতীয় জাদুঘরে দেওয়া হবে। সেখানে প্রদর্শন করা হবে জাদুঘরের দর্শনার্থীদের জন্য। সে হিসেবে আমরা জাদুঘরে দিয়েছিলাম।