ভবদহের ভয়াবহতা লেখা অসম্ভব
মাহফুজ জুয়েল
যশোরে গিয়েছিলাম ভবদহের জলাবদ্ধতা দেখতে; দেখতে গিয়েই দেখলাম শব্দের সীমাবদ্ধতা। এই ‘জলাবদ্ধতা’ শব্দ দিয়ে ঢাকায় বসে বা পৃথিবীর অন্য কোথাও বসে ভবদহের পরিস্থিতির কিছুই বোঝা যাবে না। ওই ‘শব্দ’ এই আত্মঘাতী দুর্যোগ-দুর্ভোগ কল্পনাতীত দুর্দশার মাথামু-ুও বোঝাতে পারে না। ওই অবিশ্বাস্য জনভোগান্তির কি নাম দেবে কবি? আমি আক্ষরিক অর্থেই ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি কিভাবে কেমন করে লিখব ওই মানবিক বিপর্যয়ের কথা! সত্যিই আমি জানি না। তবে এটা জানি, আমার পক্ষে কখনোই ভবদহের ভয়াবহতা লেখা সম্ভব নয়। এমনকি আমি জানি, ভবদেহ নিয়ে যিনি সবচেয়ে ভালো লিখবেন, তিনিও বড়জোর তোতলাবেন মাত্র।
হাঁটুজলে বহুদূর হেঁটে হেঁটে, হাজার হাজার পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ দুর্দশা দেখে দেখে, গল্প শুনে শুনেই আমি আধমরা হয়ে গেছি। আমরা কথা বলেছি স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ প্রায় সব শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে। যতই কথা বলেছি ততই ক্ষত-বিক্ষত হয়েছি।
অসংখ্য মানুষের মুখে আমরা সাপের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থানের গল্প শুনেছি। শুনেছি বাচ্চাকে যাতে কামড় না দেয় সে কারণে সাপের চোখে চোখ রেখে সারারাত না ঘুমিয়ে থাকা মায়ের গল্প! শুনেছি ইতোমধ্যেই সাপের কামড়ে মারা যাওয়া ২০ জন মানুষের কথা। শুনেছি অনাহার-অর্ধাহার, শৌচাগার সমস্যাসহ নানারকম সমস্যার কথা। এখন ছবির যুগ। আমরাও ইচ্ছেমতো ছবি তুলেছি; ডুবে যাওয়া ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, খেলার মাঠ, মন্দির-মসজিদ, রাস্তাঘাট, কংক্রিটের সবুজ শ্যাওলা, দেব দেবী, রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির হাজার ছবি। কিন্তু কোনো ছবিতেই ভবদহের ভয়াবহতা স্পষ্ট নয়।
তিনদিন পর ঢাকায় ফিরে সত্যি আমি কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু এটুকু বুঝতেছি, যশোর নয়, গোটা বাংলাদেশের লজ্জাজনক দুঃখের নাম, ব্যর্থতার নাম ভবদহ। শুধু এটুকু বলছিÑ বন্ধুগণ, আপনারা কষ্ট করে একটু খোঁজ-খবর নেন। ভবদহবাসীর পাশে দাঁড়ান। সাহায্যের হাত বাড়ান। যেকোনো ধরনের সাহায্য। ওদের আর্তনাদ শুনুন। ওদেরকে বাঁচান।
লেখক: কবি, সাংবাদিক ও আন্দোলনকর্মী
সম্পাদনা: আশিক রহমান