অন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ
গেল সপ্তাহের একটি আনন্দের খবর দিয়ে লেখা শুরু করিÑ ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার ভা-ার আরও সমৃদ্ধ হয়ে ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। প্রতি মাসে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব’।
বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়ন ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাকি রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৬ বছরের মাথায় সেই রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এই হিসেবে বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়েছে ৩১ গুন। এখানে উল্লেখ করা দরকার, আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল।
স্বীকার করতে হবে, এ এক অন্য বাংলাদেশ। কেবল বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড নয়, রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেশের সকল সেক্টরের উন্নয়নে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে অকল্পনীয় উন্নয়ন আসেনি। এসেছে বলেই আজ প্রতি ঘরে ছেলে-মেয়ে উভয়েই উচ্চ শিক্ষিত হচ্ছে; চিকিৎসার জন্য শহরে ছুটতে হচ্ছে না, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে; খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে দেশ থেকে বিদেশে চাল রপ্তানি হচ্ছে এবং চলতি মাস থেকে পঞ্চাশ লাখ দরিদ্র পরিবারগুলোকে দশ টাকা কেজি দরে মাসে ত্রিশ কেজি চাল দিবে সরকার। আর কে না জানে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া সকল অর্জনই ব্যর্থ হতে বাধ্য, সেই খাতে বর্তমান সরকারের সাফল্য অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে, তা অকপটে সকলেই স্বীকার করবে। তেমনি আরেকটি আলোচিত খাত হচ্ছে, প্রযুক্তির উন্নয়ন। হাতের মুঠোই এনে দিয়েছে বিশ্ব। সবার হাতে স্মার্টফোন। যোগাযোগে এখন চিঠি চালাচালি করতে হয় না। মুহূর্তের সংবাদ মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে। টাকা জমা এবং প্রদান সেটিও এখন হাতের মুঠোয়। পাশাপাশি প্রযুক্তি সচল রাখতে সরকার জোর দিয়েছে বিদ্যুতের উন্নয়নে। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের এই চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পরিবর্তন আসছে দেশের অর্থনীতিতে। ফলে উন্নত দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি হার ধরে রাখা যেখানে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ দেখাচ্ছে অন্য নজির। ক্রমাগত বেড়েই চলেছে প্রবৃদ্ধির হার।
বর্তমান অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার অতিক্রম করছে সাত শতাংশের ঘর। আর এসব কেবল রাজনৈতিক বচন নয়। অগ্রগতি এবং প্রবৃদ্ধির এই সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ইতোমধ্যে তারা বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় উন্নীত করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শান্তিকন্যা শেখ হাসিনার ভিশন হচ্ছেÑ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় নিয়ে যাওয়া। যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, আমরা বিশ্বাস করি সে ভিশন বাস্তবায়ন অবশ্যই সম্ভব। এক্ষেত্রে সকলের দেশপ্রেম জাগ্রত করা দরকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থা রাখা।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন