পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক
কাজী সিরাজ
একসময় মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ জিয়াউর রহমানকে যে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছিল তা দীর্ঘদিন যাবৎ জাতীয় যাদুঘরে ছিল। বিএনপি সরকার ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর পদক দিয়েছিল। বর্তমান সরকার সেটা আবার যাদুঘর থেকে সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী। যাদুঘর থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার বা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেই আমি মনে করি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে নেতিবাচক, রেষারেষির সম্পর্ক তার পরিণতি এটা। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, এটা তো স্বীকৃত একটা ঘটনা। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। ইতিহাসও তাই সাক্ষ্য দেয়।
জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যে উপাধি দেওয়া হয়েছিল, তা তো সর্বজন স্বীকৃত। এখন জিয়াউর রহমানের পদক যাদুঘর থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। দেশের উচ্চ আদালত হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তো আমাদের কিছু বলা ও করার থাকে না।
উচ্চ আদালতের যেকোনো সিদ্ধান্তে একমত না হলেও সেই সিদ্ধান্ত মানতে হবে। আদালতের সিদ্ধান্তকে যদি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন, তাহলে তো আর করার কিছুই থাকে না। বিএনপি যদি এ ব্যাপারে কোনো মামলা করে, তবে এর বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। একসময় হয়তো জিয়াউর রহমানের পদক আবার ফিরিয়ে আনা হবে। জিয়াউর রহমানের পদকটা তো তেমন কোনো ক্ষতিকর কিছু ছিল না বা কারও ক্ষতি করছিল এমনও তো নয়। বর্তমান সরকার যদি এখন তার পদক প্রত্যাহার করে নেয়, কি হবে? বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তখন বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করবে, পরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষতা পেলে তখন জিয়াউর রহমানকে নাকচ করবেÑ এমনটিই কি চলতে থাকবে? আমাদের ইতিহাস কী তাহলে একেক সময় একেক রকম হতে থাকবেÑ এটা হওয়া উচিত নয়। এমনটি প্রত্যাশা করে না মানুষ।
পরিচিতি: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: শরিফুল ইসলাম / সম্পাদনা: আশিক রহমান