ইন্টারনেটে জঙ্গি কার্যক্রমে নজরদারি কতটা?
রিকু আমির: ইন্টারনেটে জঙ্গিদের তৎপরতা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় ইন্টারনেটে এ ধরনের বহু ওয়েবসাইট, ভিডিও এবং অডিও পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টারনেটে জঙ্গি তৎপরতা মোকাবিলা করা বিরাট চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের শিক্ষক বিএম মইনুল হোসেন। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমনি জঙ্গিদের অনলাইন কার্যক্রমের পেছনে ছুটছে, তেমনি জঙ্গিরাও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, র্যাবের দাবি- নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবি পরিচালিত আত-তামকীন নামের একটি জঙ্গি ওয়েবসাইটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয়জনকে আটক করেছে। আটককৃতদের মধ্যে একজনকে ওই পেজের অ্যাডমিন বলে বর্ণনা করছে র্যাব।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করেন- বাংলাদেশে ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা ব্যাপক। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ফেসবুকে সালাউদ্দিনের ঘোড়া নামের একটি পেজ আছে, যেখান থেকে উগ্রবাদীরা তাদের ভাষায় ইসলাম-বিরোধী ব্যক্তিদের হত্যার হুমকিও দিয়েছে। সালাউদ্দিনের ঘোড়া নামের ফেসবুক পেজকে কয়েকবার বন্ধ করা হলেও আবার খোলা হয়েছে। তিনি বাঁশের কেল্লা ফেসবুক পেজের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, বাঁশের কেল্লা নামে অন্ততঃ ১৫টি পেইজের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে আমরা অনেক সময় বিভ্রান্ত হই যে, কোনটা আসল বাঁশের কেল্লা।
সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা এখন অনলাইন বা ইন্টারনেটকে তাদের যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। পারস্পরিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে ধর্মীয় মতবাদও তারা প্রচার করছে অনলাইনে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন উগ্রবাদের সমর্থনে যখন কোনো ওয়েবসাইট বা পেজ খোলা হয়, তখন অনেকে সেসব পাতায় ভিজিট করে, বুঝে বা না বুঝে লাইক দেয় বা কমেন্ট করে। তখন উগ্রবাদীরা সেখান থেকে কোনো কোনো ব্যক্তিকে তাদের দলে ভেড়ানোর টার্গেট করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ইন্টারনেটে জঙ্গি তৎপরতার উপর নজরদারি এবং জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য নবগঠিত কাউন্টার টেরোরিজমের আওতায় একটি ইউনিট কাজ করছে।
ইন্টারনেটভিত্তিক জঙ্গি তৎপরতা মোকাবিলার জন্য পুলিশের যেমনি ইউনিট আছে তেমনি র্যাবসহ অন্য গোয়েন্দা সংস্থারও নজরদারি আছে বলে জানা যায়।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উগ্রবাদের সমর্থনে কোনো ওয়েবসাইট যদি বিদেশ থেকে পরিচালিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ দেশের ভিতরের কেউ যাতে সেটি দেখতে না পারে সেজন্য ব্লক করে দিতে পারে। এ ধরনের অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। কিন্তু একটি একটি সাইট বন্ধ করে দিলে আরেকটি সাইট খোলা হচ্ছে। এমনও হচ্ছে- দেশে বসে কোনো ওয়েবসাইট বা পেইজ চালানো হচ্ছে, কিন্তু তদন্ত করে দেখা গেছে, সেটা পরিচালিত হচ্ছে বিদেশ থেকে। এক্ষেত্রে বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। অপরাধীরা নিজেকে আড়াল করতেই এ কৌশল ব্যবহার করে থাকে।
তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মইনুল হোসেন বলেন, বিশেষ কিছু সফটওয়্যার আছে। এগুলো যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে আপনি কোন কম্পিউটার থেকে ব্রাউজ, কোথায় অবস্থান করছেন, সেটা একটা ভুয়া আইডি করে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তির দৌড়ে কে কতটা এগিয়ে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। প্রযুক্তি ব্যবহারে অপরাধীরা যদি নিরাপত্তা বাহিনীর চেয়ে বেশি দক্ষ হয়, তাহলে তাদের শনাক্ত করা ভীষণ মুসকিল।
মইনুল হোসেন বলেন, প্রযুক্তি মোকাবিলা করতে হয়, প্রযুক্তি দিয়েই। এর শেষ বলতে কিছু নেই। দিন দিন এটা আপডেট হয়। অনলাইনে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বাড়তি সরঞ্জাম আছে। যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকে, তবে তারাই জিতবে। আর যদি অপরাধীরা প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকে তাহলে তারাই জিতবে ।
মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, রিক্রুটমেন্ট করার সময় জঙ্গিরা কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল করে। জঙ্গিবাদ বিরোধিতায় প্রাতিষ্ঠানিক যে আন্দোলনটা গড়ে উঠতে যাচ্ছে সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, অনলাইন এখন তাদের সবচেয়ে উর্বর মাধ্যম। যারা ব্রেনওয়াশ করতে চায় তারা কয়েকটি বিষয়ে নজর দিয়ে থাকে। ভুলে গেলে চলবে না, যারা হাইস্কুল শেষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর পর্যায়ে থাকে, তাদের মগজ ধোলাই করা তুলনামূলকভাবে সহজ। আর অনলাইন মাধ্যম না-বুঝে ব্যবহার করার প্রবণতা এই বয়সীদের মধ্যেই বেশি। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম