ওজন কমেছে শফিক রেহমানের হান্নান শাহ ও শাজাহান সিরাজ গুরুতর অসুস্থ
শাহানুজ্জামান টিটু ও রিকু আমির : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এরপর পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।
এসব তথ্য জানিয়েছেন হান্নান শাহর একান্ত সচিব শাজাহান সিরাজ। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে নিজ বাসায় বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার হৃদস্পন্দন ও রক্ত চাপের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। হান্নান শাহর ছেলে রিয়াজ জানান, বুধবার সকালে চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন ১০ ভাগের মতো উন্নতি হয়েছে। প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসকরা তাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন।
তিনি বলেন, বাবার অসুস্থতার সংবাদ জানার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ বিএনপির নির্বাহী কমিটি ও তার নির্বাচনি এলাকা গাজীপুর-কাপাসিয়া থেকে নেতাকর্মীরা হাসপাতালে যান এবং শরীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।
এদিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণাপত্রের পাঠক এবং সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাজাহান সিরাজ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এসব তথ্য জানিয়ে বিএনপির ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছে, কথা বলতে পারছেন না। বর্তমানে তাকে বাসায় রাখা হয়েছে। কিছুদিন আগেও তিনি অনেকটা ইশারা-ইঙ্গিতে কিছুটা শব্দ করে কথা বলতেন। মুখ দিয়ে স্বাভাবিক খাবারও খেতে পারছেন না। দুবছর ধরে পেটে লাগানো টিউব দিয়ে তরল খাবার খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার পতœী রাবেয়া সিরাজ।
তিনি আরও জানান, ২০১২ সালে চোখের চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ওই সময় তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর সেখান থেকেই তাকে নেয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানে একটি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে ফুসফুসের টিউমার অপসারণ করা হয়। এরপর কিছুটা সুস্থ হলে তিনি দেশে ফিরেন। কিন্তু ২০১৪ সালের শেষ দিকে হঠাৎ নীরব হয়ে যান তিনি। ওই সময় থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার মাথায় টিউমার ধরা পড়ে। কিন্তু আগে থেকেই তার ডায়াবেটিস, কিডনিসহ নানা জটিল রোগ থাকায় মাথায় অস্ত্রোপচার করা যায়নি। পরে চিকিৎসকরা ওষুধের মাধ্যমে টিউমারটি অপসারণের পরামর্শ দেন।
শাজাহান সিরাজ ১৯৪৩ সালে টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর প্রথমে নৌপরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে ফের চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তাকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
এদিকে, ওজন কমে গিয়েছে কারাগার থেকে সদ্য মুক্ত সাংবাদিক শফিক রেহমানের। গত মঙ্গলবার মুক্তি লাভ করার পর থেকে তিনি রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ।
শফিক রেহমানের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, কারাগার থেকে শফিক রেহমান সবচেয়ে বেশি সমস্যাগ্রস্ত হয়েছেন খাবার-দাবার নিয়ে। সেখানকার খাবার তিনি খেতে পারেননি। সাধারণ ফলমূল ভক্ষণ করতে হয়েছে তাকে। ডায়াবেটিক রোগী হবার দরুন সে অনুযায়ী শারীরিক পরিচর্যা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। এজন্য তার ওজন হ্রাস পেয়েছে অনেক। তিনি যে জামা-কাপড় পরিধান করতেন, তা তার দেহে অনেকটাই ঢিলেঢালা হয়ে গেছে। তিনি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে, একা একা হাঁটতে পারেন না। কোথাও গেলে হুইল চেয়ারের সহায়তা নিতে হচ্ছে।
গতকাল শফিক রেহমানকে বারডেম হাসপাতালের ১০০১ নং কেবিনে গিয়ে দেখে এসেছেন, অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মুসা। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী- শফিক রেহমানের রক্ত, হৃদপি- ও বুকের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হবে।
জানা গেছে, শফিক রেহমানের ডায়াবেটিস ও হৃদপি-ের সমস্যা বহু পুরানা। ১০-১২ বছর পূর্বে লন্ডনের একটি হাসপাতালে তার হৃদপি-ে রিং পরানো হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতিবছর সে হাসপাতালে গিয়ে সেটি চেকাপ করতেন তিনি। কিন্তু কারাগারে থাকায় এতে বিরতি পড়ে। এখন তিনি বিদেশে যেতে পারছেন না তার পাসপোর্ট জব্দসহ আরও কিছু জটিলতার কারণে। কাজেই বারডেমে গ্রহণ করতে হবে হৃদপি-ের চিকিৎসা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদকে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার মামলায় গত ১৬ এপ্রিল ঢাকার ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। ২৭ এপ্রিল তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। গত ৩১ আগস্ট তাকে তিন মাসের জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সম্পাদনা: দেলওয়ার হোসাইন